কন্যা জন্মের চারদিন পর গণপিটুনিতে প্রাণ হারালেন ছাত্রলীগ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: রবিবার ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন
কন্যা জন্মের চারদিন পর গণপিটুনিতে প্রাণ হারালেন ছাত্রলীগ নেতা

রাজশাহী, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪: রাজশাহীতে গণপিটুনিতে গুরুতর আহত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত্যুর মাত্র চারদিন আগেই কন্যা সন্তানের বাবা হন মাসুদ, যা তার পরিবারে সাময়িক আনন্দের ছোঁয়া এনেছিল। তবে, সেই আনন্দ শোকের সাগরে রূপ নিল মাসুদের আকস্মিক ও মর্মান্তিক মৃত্যুর মাধ্যমে।


গতকাল শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় একদল যুবক তাকে ধরে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে আসে। তখন তিনি গুরুতর আহত ছিলেন। বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ পারভেজ জানান, মাসুদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের তত্ত্বাবধানে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তিনি মারা যান।


মাসুদের বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার উপর হামলার অভিযোগ ছিল, যা তার জীবনকে জটিলতার মধ্যে ফেলেছিল। ছাত্র জীবনে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিচিত মুখ ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। 


মাসুদের জীবন একসময় অনেক প্রতিশ্রুতিশীল ছিল, কিন্তু ২০১৪ সালে ঘটে যাওয়া একটি সন্ত্রাসী হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। এই হামলার পর থেকেই তিনি পঙ্গু জীবনযাপন করছিলেন। তার শারীরিক অবস্থার কারণে তার জীবন ছিল সীমাবদ্ধ, তবে তবুও তিনি জীবন সংগ্রামে অবিচল ছিলেন।


২০২৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ পান মাসুদ। এটি তার জন্য একটি নতুন জীবন শুরুর সূচনা ছিল, যদিও তিনি ছাত্ররাজনীতি থেকে বেশ কিছুটা দূরে সরে এসেছিলেন। তবে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে তার যুক্ত থাকার সময়কাল তাকে অনেকের কাছে পরিচিত করে তুলেছিল।


গত ৩ সেপ্টেম্বর মাসুদের কন্যা সন্তানের জন্ম হয়, যা তার জীবনে এক মিষ্টি মুহূর্ত এনে দিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তার এই নতুন পিতৃত্বের আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তার মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, তার বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের জন্যও এক গভীর শোকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।


মাসুদের আকস্মিক মৃত্যুর পর তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকর্মীরা এগিয়ে এসেছেন। তারা শোক প্রকাশ করেছেন এবং তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন।


মাসুদের মৃত্যুতে তার পরিবারের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার নবজাতক কন্যা তার পিতার মুখ দেখতে পেল না, যা তার পরিবারের জন্য একটি স্থায়ী বেদনার কারণ হয়ে থাকবে। 


এই ঘটনার পর থেকে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, যেন এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে।