নারীদের পছন্দের তালিকায় বেগুন থাকে কেন? জানুন রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার ৭ই অক্টোবর ২০২২ ০৮:২০ অপরাহ্ন
নারীদের পছন্দের তালিকায় বেগুন থাকে কেন? জানুন রহস্য

আজ-কাল করনা ভাইরাসের জন্য আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হয়ে  পড়েছে । এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরে । তাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির কাছ-কাছি আশা  বিপদ জনক । তাই যত সম্ভব বিভিন্ন চিকিৎসালয় এড়িয়ে চলা ভালো। আর এটা তখন সম্ভব যদি আমাদের শরীর সুস্থ  থাকে । 


       আমরা সবাই জানি আমরা প্রতিদিন যেসব সকসব্জী খায় তার মধ্যে অনেক এমন গুণ আছে  যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাক-সব্জীর ভূমিকা অসীম।  সুলভ ও সস্তা শাক সব্জী শরীর কে সুস্থ রাখে সেই সঙ্গে যদি কোনো কারণে শারীরিক অসুবিধা বা অসুস্থতা দেখা দেয় , তাহলে নির্দেশ অনুসারে এগুলোর প্রয়োগেও  রোগ সারে । তবে আমার অনেকে জানি না কোন সব্জীর কোন গুণ আছে । তাই বিভিন্ন আয়ুরবেদিক বই, নিউজ প্রতিবেদন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এখানে দিলাম । ... 


একটু জেনে নিন বেগুনের বিভিন্ন উপকারিতা:


বেগুন আমাদের কাছে অতিপরিচিত একটি সবজি । বর্ষার দিনে খিচুড়ির সঙ্গে বেগুন ভাজা অথবা সাদা ভাতের সঙ্গে ঝাল ঝাল বেগুন ভর্তা খেতে পছন্দ করেন না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তরকারি হিসেবেও বেগুন খুবই উপকারী। পুষ্টিগুণের দিক থেকেও বেগুন অনন্য। বেগুনে রয়েছে উচ্চমাত্রার আঁশ-জাতীয় খাদ্য উপাদান। যা বদ হজম দূর করে। বেগুন আরো রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, শর্করা, চর্বি, আমিষ, আয়রন। বেগুন এর উদ্ভিজ্জ আমিষ শরীরের হাড়কে শক্তিশালী করে। তাহলে চলুন জেনে নেই বেগুনের গুনাগুন ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে....


১) হৃদপিন্ড ভাল রাখে:- বেগুন ফাইবার, ভিটামিন বি ১, বি ৬, বি ৩, সি, কে তে ভরপুর থাকে। এতে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা, হৃদপিন্ডের জন্য উপকারী একটি খাবার। হৃদপিন্ডের জন্য অপরিহার্য ফ্ল্যাভোনয়েড যা বেগুনেই বিদ্যমান থাকে। তাই নিয়মিত বেগুন খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় অনেক ক্ষেত্রে।


২) ডায়বেটিস প্রতিরোধ:- বেগুনে উচ্চ মাত্রার ফাইবার ও কম দ্রবণীয় কার্বোহাইড্রেট থাকে বলে রক্তের গ্লুকোজ ও ইনসুলিনের মাত্রার সমস্যা আছে যাদের তাদের জন্য উপকারী খাবার। বেগুনে উচ্চ মাত্রায় আঁশ এবং কম পরিমাণে দ্রবণীয় শর্করা থাকে ফলে ডায়বেটিস প্রতিরোধের কাজেও বেগুন ভূমিকা রাখতে পারে।


৩) মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়:- বেগুনের ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট জ্ঞানীয় দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং সর্বদা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই উপকারী। এই উপাদানটি মস্তিষ্ককে রোগ ও টক্সিন থেকে মুক্ত থাকতেও সহায়ক এবং মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।


৪) ত্বক ও চুল ভাল রাখে:- বেগুন ভিটামিন এ, সি, ই এবং কে সমৃদ্ধ সবজি। ভিটামিন এ চোখের পুষ্টি জোগায়, চোখের যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর ভিটামিন সি ত্বক, চুল, নখকে করে মজবুত। দেহে রক্ত জমাট বাঁধার বিরুদ্ধে কাজ করে ভিটামিন ই ও কে। এই ভিটামিন চারটি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে বহুগুণে কার্যকর।


৫) রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে:- বেগুনে আয়রনও রয়েছে অনেক মাত্রায়, যা রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রক্তশূন্যতার রোগীরাও খেতে পারে এই সবজি। এতে চিনির পরিমাণ খুবই সামান্য। তাই ডায়াবেটিসের রোগী, হৃদরোগী ও অধিক ওজন সম্পন্ন ব্যক্তিরা নিশ্চিন্তে খেতে পারে বেগুনের তরকারি।


👉জেনে নিন সুস্থ থাকার জন্য বেগুন জরুরি কেন...


➤বেগুনে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।


➤বেগুনের খোসায় এমন এক ধরনের উপাদান থাকে যা মস্তিষ্কের কোষের জন্য প্রয়োজনীয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতি কমে যাওয়ার সমস্যা দূর করতেও নিয়মিত খেতে পারেন বেগুন।


➤পেটে মেদ জমতে দেয় না উপকারী এই সবজি। তাই ডায়েট চার্টে নিশ্চিন্তে রাখতে পারেন বেগুন।


➤বেগুনে থাকা প্রাকৃতিক ফাইবার খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে।



➤নিয়মিত বেগুন খেলে শরীরের কোষ অকালে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য তাই বেগুন খাওয়া জরুরি।


➤বেগুনে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও বিভিন্ন দরকারি পুষ্টি উপাদান। এগুলো হাড় সুস্থ রাখে ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করে।


➤হৃদযন্ত্র ও লিভারের সুস্থতায় নিয়মিত বেগুন খান।

  


😍 সুস্থ থাকতে বেগুন এর  প্রয়োগ 


👉 কচি বেগুন পুড়িয়ে রোজ সকালে খালি পেটে ২ চামচ গুড় মিশিয়ে ৪-৫সপ্তাহ খেলে ম্যালেরিয়ার রোগের ফলে  লিভার বেড়ে যাওয়া কমে যায়। 


👉 লিভারের দোষের জন্য চেহারায় হলদেটে ভাব এলে তা বেগুন পুড়িয়ে চার সপ্তাহ প্রয়োগে ক্রমশ কমে যায়। 

 

👉 যাদের ঘুম ভালো হয় না তারা যদি একটু বেগুন পোড়া মধু মিশিয়ে সন্ধ্যেবেলা চেটে খান এক সপ্তাহ তাহলে তাদের রাত্রে ভালো ঘুম হবে। 

 

👉বেগুনের তরকারি বেগুন পোড়া বেগুনের সুপে রোজ যদি একটু হিং ও রসুন মিশিয়ে খাওয়া যায় এক মাস তাহলে বায়ুর প্রকোপ কমবে । যদি কারো পেটে বায়ু রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে সেটাও কমে যায় বা সেরে যায় । 


👉মহিলাদের অনিয়মিত ঋতু না হলে বা কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে তারা যদি শীতকালে নিয়ম করে চার সপ্তাহ বেগুনের তরকারি বাজরার  রুটি এবং গুড় খান তাহলে উপকার পাবেন। অবশ্য যাদের গরমের ধাত বেশি তাদের পক্ষে এটা না খাওয়াই ভালো । 


👉 নিয়মিত ৬ মাস বেগুন খেলে মিত্রকৃচ্ছ্রতা ছাড়ে ।


👉 কিডনিতে পাথর হওয়ায় প্রারম্ভিক অবস্থান দুই থেকে তিন মাস বেগুন খেলে কিডনির পাথর গলে গিয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যাবে । 


👉 মুরগির ডিমের সাইজের ছোট গোল সাদা বেগুন ৬ মাস খওয়া অর্শের পক্ষে উপকারী। 


👉 বেগুনের পুলটিস বেঁধে সাত দিন রাখলে ফোড়া তাড়াতাড়ি পেকে যায়।


👉 বেগুনের রস খেলে ধুতরার বিষ নেমে যায়।  এক গ্লাসে দুটো বেগুনের রস খান।