ভারতে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের ভয়াবহ অপরাধের তথ্য একের পর এক প্রকাশ্যে আসছে। সম্প্রতি তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তার শাসনামলে গোপন কারাগারে শিশুদের আটকে রাখার মতো নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্যবহৃত হতো, এমনকি তাদের মায়েদের দুধ পান করতেও দেওয়া হতো না।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ সব ঘটনা।
তদন্তকারী কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোপন কারাগারে শত শত বন্দির মধ্যে ছয়জন শিশু ছিল, যাদের তাদের মায়েদের সঙ্গে মাসের পর মাস বন্দি রাখা হয়। এসব শিশুকে তাদের মায়ের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে ব্যবহার করা হতো। এক গর্ভবতী নারীকে তার দুটি ছোট সন্তানসহ আটকে রাখার ঘটনাও উল্লেখ করেছে কমিশন।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তিনি শিশু অবস্থায় মায়ের সঙ্গে বন্দি ছিলেন এবং তার মা কখনো ফিরে আসেননি। আরেক ঘটনায় একটি শিশুকে তার বাবার ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য মায়ের দুধ পান করতে দেওয়া হয়নি।
শেখ হাসিনার সরকার বরাবরই এসব গুম ও নিখোঁজের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা দাবি করত, নিখোঁজদের অনেকে ইউরোপে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছেন। কিন্তু ভুক্তভোগীদের পরিবারের অভিযোগ এবং কমিশনের তদন্ত এসব দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, ভুক্তভোগীদের বক্তব্য থেকে নির্যাতনকারী বাহিনীকে চিহ্নিত করা সম্ভব। তিনি কমান্ডারদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছেন। এসব ঘটনার মানসিক, আর্থিক ও আইনি প্রভাব ভুক্তভোগীদের জীবনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে।
এই প্রতিবেদনগুলো নতুন করে আলোচনায় এনেছে শেখ হাসিনার শাসনামলের ফ্যাসিস্ট চরিত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ দিক। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব অপরাধের তদন্ত ও বিচারের দাবি জোরালো হচ্ছে।
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনার সরকারের অপরাধের গভীরতাও সামনে আসতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে এই অপরাধের বিচার কেমন হবে, তা নিয়ে এখন দৃষ্টি সবার।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।