প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৫
উত্তরার মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় শহিদ হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী সায়ানকে নিয়ে এক হৃদয়ছোঁয়া স্মৃতিচারণ করেছেন তার মা মাইলস্টোন কলেজের কেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষক শাম্মী। রোববার (২৭ জুলাই) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি ছেলের স্মৃতিকে ঘিরে বেদনার্ত এক স্ট্যাটাস দেন, যা ইতোমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “আমার ছেলে এমন প্রখর মেধাবী ছিল, একটু পড়লেই সবকিছু শিখে ফেলত। ছিল ভদ্র, নম্র, বিনয়ী। ক্লাস টু থেকেই রোজা রাখতো, নামাজ পড়তো।” সন্তান হারানোর যন্ত্রণায় শাম্মী নিজেকে ব্যর্থ মা বলে আখ্যা দেন এবং সবার কাছে ক্ষমাও চান।
তিনি লেখেন, “আমি ও ইউসুফ স্যার হয়তো কোনো বড় ভুল বা অন্যায় করে ফেলেছি, যার জন্য আল্লাহ আমাদের এত বড় শাস্তি দিয়েছেন।” ছেলের মৃত্যুকে তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি হিসেবে মেনে নিয়ে ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করছেন বলেও জানান।
সায়ান সম্পর্কে তিনি বলেন, “ওর বাবা সবসময় বলত, আমাদের ছেলে একদিন কিছু আবিষ্কার করবে।” কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। নিরাপত্তার অভাবে দেশে না রেখে ছেলেকে বিদেশে পড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ বাস্তবতা আজ তাদের ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে।
শাম্মী আরও লেখেন, “ঘটনার দিন একটি নাম্বার থেকে ফোন আসে, জানতে পারি একজন ছাত্র আমার ছেলেকে বাংলাদেশ মেডিকেলে নিয়ে গেছে।” সেই ছাত্র অমিত, যিনি ইউসুফ স্যারেরই সাবেক ছাত্র, সায়ানের শেষ মুহূর্তে পাশে ছিলেন এবং মায়ের নম্বর পর্যন্ত নিয়ে দেন।
স্মৃতিচারণে উঠে আসে, “বাংলাদেশ মেডিকেলে যখন ওর দগ্ধ শরীর দেখে ওর চাচ্চু কাঁদছিলেন, তখনও আমার ছেলে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিল, ‘চিন্তা কোরো না চাচ্চু, সব ঠিক হয়ে যাবে।’” এমন আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্য অবাক করেছে সকলকে।
আইসিইউতে থাকা অবস্থাতেও সায়ান মাকে দেখতে চেয়েছিল। শাম্মী লেখেন, “আমি ওকে বলেছিলাম, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জোয়ালিমীন’ পড়তে থাকো।” মাথা নেড়ে সায়ান সম্মতি দিয়েছিল। এটাই ছিল মা-ছেলের শেষ কথা।
শেষে তিনি লেখেন, “আমি জানি না কিভাবে ওকে ছাড়া বেঁচে থাকব। আমি এক ব্যর্থ মা, তোর জন্য কিছুই করতে পারলাম না।” এই মায়ের কান্না শুধু একজন সন্তানের জন্য নয়, বরং এক স্বপ্নভঙ্গ, এক অসমাপ্ত জীবনের করুণ দলিল।