প্রকাশ: ৬ জুলাই ২০২৫, ১১:২৫
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ঢাকায় শুরু হয়েছে শোক ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ভরপুর তাজিয়া মিছিল। রোববার সকাল ১০টার পর পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক হোসেনি দালান ইমামবাড়া থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মিছিলটি শুরু হয়। প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো এই ইমামবাড়ায় সকাল থেকেই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের হাজারো মুসলমান জড়ো হন। সবার মাঝে ছিল শোকের আবহ, আর ধর্মীয় চেতনার গভীরতা।
মিছিলে অংশ নেওয়া মানুষের বেশিরভাগই পরেছিলেন কালো পোশাক। অনেকের হাতে ছিল প্রতীকী ছুরি, আলাম, নিশান, বেস্তা এবং বইলালাম। তারা 'হায় হোসেন, হায় হোসেন' ধ্বনি দিয়ে শহীদ ইমাম হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এসময় রাজধানীর বাতাস ভারী হয়ে ওঠে আবেগ ও বেদনার সম্মিলনে। মিছিলটি আজিমপুর, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, সায়েন্সল্যাব হয়ে ধানমন্ডিতে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এই তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে আসা একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “এই দিনটি আমাদের জন্য চরম বেদনার। ইমাম হোসেন (আ.) ও তার পরিবারকে কারবালার প্রান্তরে যেভাবে শহীদ করা হয়েছিল, তা আমরা কখনো ভুলতে পারি না। প্রতিবছর আমি এই মিছিলে আসি যেন তাদের ত্যাগের স্মৃতিকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারি।”
তাজিয়া মিছিল নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হোসেনি দালান ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী, সোয়াট টিম, র্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। সড়কে ছিল যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ব্যবস্থাও।
আশুরা ইসলামের ইতিহাসে একটি শোকাবহ দিন হিসেবে স্বীকৃত। হিজরি ৬১ সনের ১০ মুহাররম কারবালার প্রান্তরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (আ.) ও তার পরিবার ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। শোক, ত্যাগ ও আত্মদানের এই দিনটি প্রতিবছর গভীর শ্রদ্ধা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করেন শিয়া সম্প্রদায়।
এই ঘটনাকে স্মরণ করে শিয়া মুসলিমরা প্রতিবছর তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করে থাকেন। তারা মনে করেন, ইমাম হোসেনের আদর্শকে ধারণ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই ইসলামের সত্য পথ। তাই আশুরার দিনটিকে শুধু শোক নয়, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে একটি সংগ্রামের প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত তাজিয়া মিছিল ছিল শান্তিপূর্ণ ও সংগঠিত। অংশগ্রহণকারীরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের পাশাপাশি সমাজে সহিষ্ণুতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। আশুরার এই বার্তা নতুন প্রজন্মের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ুক—এই প্রত্যাশাই সবার।