মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এক বিতর্কিত পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকা কিনে নিয়ে এর মালিকানা গ্রহণ করতে চায়। তার মতে, গাজা একটি বড় রিয়েল এস্টেট সাইট এবং এটি পুনর্নির্মাণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোকেও দায়িত্ব দিতে পারে। ৯ ফেব্রুয়ারি নিউ অরলিন্সে যাওয়ার পথে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প তার পরিকল্পনায় আরও বলেন, গাজার পুনর্নির্মাণে অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলো অংশ নিতে পারে। তিনি একে একটি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে দেখতে চান, যা গাজার অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করবে এবং বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান ও আবাসন সৃষ্টির সুযোগ তৈরি করবে। তিনি দাবি করেন, হামাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত গাজার মালিকানা নিশ্চিত করা যাবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও জানান, গাজার বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপর্যস্ত এবং এটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্পের মতে, গাজায় কোনো বিকল্পের অভাবের কারণে মানুষ সেখান থেকে চলে যেতে চায় না। তবে, তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় সরবরাহ করলে তারা গাজায় ফিরে যাবে না।
এই ঘোষণার পর গাজার ক্ষমতাসীন হামাসের পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো সদস্য ইজ্জত আল-রিশেক টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে বলেছেন, গাজা কোনো রিয়েল এস্টেট সাইট নয় যা কেনা-বেচা করা যায়। এটি ফিলিস্তিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি ট্রাম্পের এমন মন্তব্যকে 'অযৌক্তিক' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তার পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যটি অনেকেই সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে, তার রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মনোভাব নিয়ে ফিলিস্তিনি সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের মতে, এটি একটি ব্যর্থ পরিকল্পনা হতে পারে যা ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি ও নির্বাসনকে আরও জটিল করবে।
এদিকে, ৪ ফেব্রুয়ারি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে একটি সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প গাজা নিয়ে আরও বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা ‘দখল’ করবে এবং তা পুনর্গঠন করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবে। এই পরিকল্পনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা চলছে, যেখানে ট্রাম্পের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম নিয়ে গভীর সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার ফলে গাজার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে, ফিলিস্তিনি জনগণ ও হামাসের প্রতিবাদ এতে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করবে। তবে, ট্রাম্প তার অবস্থানে অনড় রয়েছেন এবং তিনি এখনও গাজাকে একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে দেখতে চান।
ফিলিস্তিনিরা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ঘোষণাটি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হওয়া অব্যাহত রয়েছে। ট্রাম্পের এই দখল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, এবং এটি কিভাবে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করবে তা সময়ের সাথে সাথে স্পষ্ট হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।