আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন মহলে নানা দাবি ও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এসব দাবি সরকারের বিভিন্ন খাতে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয়করণ ও সরকারি উদ্যোগের জন্য। এসব বিষয় নিয়ে নানা আশাবাদ তৈরি হলেও সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। তবে এসব ব্যয়ের প্রভাব কিভাবে সামলানো হবে, এ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি ছিল।
সম্প্রতি এই বিষয় নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ একটি সাক্ষাৎকারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এর ফলে অতিরিক্ত যে ব্যয় হবে, তা মোকাবেলা কিভাবে করা হবে, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। সাক্ষাৎকারে তাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘এ ধরনের ব্যয়ের চাপ কিভাবে সামাল দেবেন?’
জবাবে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকারের সময় এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়নি। কিন্তু আমরা যা করছি, তা একেবারে নতুন কিছু নয়। অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে বঞ্চিত ছিল। আমরা এসব ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ নিচ্ছি, তা অতিরিক্ত অর্থের কোনো চাপ তৈরি করবে না। পে কমিশনের বিষয়টি রাজনৈতিক সরকারের সময়ে ঠিক করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন এই বিষয়ে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। ২০১৫ সালে পে কমিশন করা হয়েছিল এবং এটি ভবিষ্যতে আবার হবে, তবে বর্তমানে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।’ অর্থাৎ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।
একটি প্রশ্ন ছিল, ‘তাহলে কি পে স্কেল নিয়ে কিছু পরিবর্তন হবে?’ এর জবাবে অর্থ উপদেষ্টা মাথা নেড়ে “না” সূচক উত্তর দেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘বর্তমানে আমরা কেবলমাত্র স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ওভারটাইম ও অন্যান্য কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। তবে এসব কিছু অবশ্যই ফ্রেমের মধ্যে থাকবে এবং পে স্কেল পরিবর্তনের কোন উদ্যোগ নেই।’
তবে সরকারের অন্যান্য খাতের বরাদ্দ নিয়ে তিনি কোনো ধরনের সংকোচন করবেন না বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সামাজিক খাতে যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইটি এবং সমাজকল্যাণে বরাদ্দ কমাব না। এগুলো আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং এর জন্য আমাদের কমিটমেন্ট রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের অর্থদাতারা এর আগে পরামর্শ দিয়েছিল যে, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাজেট সহায়তা নেওয়া হলেও, সামাজিক খাতের বরাদ্দে কোনো ধরনের কাটছাঁট করা হবে না।’ অর্থাৎ, অর্থ উপদেষ্টা যে অবস্থান নিয়েছেন, তাতে দেশের সামাজিক সেবা খাতের জন্য বরাদ্দ সমানভাবে বজায় রাখা হবে।
এছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে এসব খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপ মোকাবেলা করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপেরও পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, এ সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে আস্থা জাহির করা হয়েছে যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার কোনো ধরনের আপোষ করবে না।
এখন সময় এসেছে, সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নতির জন্য সামাজিক সেবা খাতে বরাদ্দ বজায় রাখার পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা বাড়ানোর। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এরকম একটি পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছেন, যাতে দেশের উন্নতি এবং জনগণের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।