২০২৪ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যায় শিক্ষার্থী ও জনতার ত্যাগ, সাহসিকতা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে। ঐতিহাসিক এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন দ্রোহের রূপ নেয় রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। ১৬ জুলাই, পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তার আত্মত্যাগ ছাত্র-জনতার মধ্যে আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে দেয়। তার সাহসিকতাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। ৩ আগস্ট তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকারের পতনের এক দফা ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়েও নাহিদ ইসলাম আন্দোলনের চূড়ান্ত সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও বাম ছাত্রসংগঠনগুলো দল-মত ভুলে একত্রিত হয়ে আন্দোলন পরিচালনা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম ৯ দফা দাবির রূপরেখা তৈরি এবং আন্দোলনকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে আন্দোলনকে জীবন্ত রাখে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও প্রবাসীদের ভূমিকা এই অভ্যুত্থানে অগ্রগণ্য ছিল। ফ্রান্স প্রবাসী পিনাকী ভট্টাচার্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন, এবং নেত্র নিউজের তাসনীম খলিল তাদের প্রচার কার্যক্রমের মাধ্যমে আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরেন। প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে পরোক্ষভাবে আন্দোলনকে সমর্থন জানান।
৫ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তার নেতৃত্বে সেনাবাহিনী জনগণের পক্ষে অবস্থান নেয়, যা রক্তপাত এড়াতে সহায়তা করে।
শিক্ষার্থীদের আহ্বানে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ফিরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জাতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং নতুন দিগন্তের সূচনা ছিল তার প্রধান লক্ষ্য।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে মনোনিবেশ করেছে। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান ইতিহাসে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে একটি সফল গণআন্দোলনের উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।