বরিশালে অপসো স্যালাইন ফার্মায় চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আন্দোলন তৃতীয় সপ্তাহে গড়ালেও মালিকপক্ষ কোনো সমাধানে রাজি হয়নি। এ অবস্থায় শনিবার (১৫ নভেম্বর) আন্দোলনকারীরা নতুন ধাপে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে দাবি আদায়ের চাপ বাড়িয়েছেন। দুপুরে বগুড়া রোডে কারখানার ফটকের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে মহাসড়কের চৌমাথা মোড়ে এসে থামে। সেখানে শ্রমিকরা মহাসড়ক সম্পূর্ণ বন্ধ করে অবস্থান নেন।
শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা অপসো স্যালাইন ফার্মাসিউটিক্যালসে পরিশ্রম করে আসছেন। প্রথমে প্রতিদিন ২২০ টাকার হাজিরায় কাজ করার পর প্রতিষ্ঠানটি তাদের মাস্টাররোলে অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় হঠাৎ করেই ৫৭০ জন শ্রমিককে বিনা নোটিশে চাকরি থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। এতে শ্রমিকদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ পরিকল্পিত এবং শ্রমিকবিরোধী। তাদের দাবি, “আমাদের ছাঁটাই করে কোম্পানি নতুনভাবে ১২০০ শ্রমিক নিয়োগের উদ্যোগ নিচ্ছে। এটা স্পষ্টভাবে আমাদের সঙ্গে অন্যায় ও ষড়যন্ত্র।”
শ্রমিকদের অভিযোগ, “অপসো স্যালাইন ফার্মা ইচ্ছাকৃতভাবে ৫৭০ জন অভিজ্ঞ শ্রমিককে ছাঁটাই করে নতুন করে ১,২০০ জন নিয়োগ দিতে চাইছে। এতে মালিকপক্ষের সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্র রয়েছে।” তারা জানান, প্রতিদিন ২২০ টাকার হাজিরায় কাজ শুরু করা শ্রমিকদের কিছুদিন আগে ‘মাস্টাররোল’-এ যোগ করা হলেও মাত্র এক বছরের মাথায় তাদের চাকরিচ্যুতির চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠন ও বাম দলের নেতারাও শ্রমিকদের প্রতি সমর্থন জানাতে উপস্থিত হন। বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, “মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের শেষ অস্ত্র। মালিকপক্ষ আইন অমান্য করে গণছাঁটাই করেছে। পুনর্বহাল ছাড়া শ্রমিকরা ঘরে ফিরবে না।” তার মতে, শ্রমিক ইউনিয়ন অনুমোদনের পরপরই ছাঁটাই হওয়ায় বিষয়টি আরও সন্দেহজনক।
অন্যদিকে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে দু’দফা বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিব মিয়া বলেন, “বৈঠকে মালিকপক্ষ দাবি করেছে, কারখানা লোকসানে চলছে। কিন্তু আমরা জানি কারখানা ভালোভাবেই লাভ করছে। যুক্তি দেখিয়ে মালিকপক্ষ ছাঁটাই সিদ্ধান্ত বাতিল না করে আমাদের সঙ্গে প্রহসন করছে।”
অবরোধের মুখে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়ে শত শত যাত্রী, বিশেষ করে দূরপাল্লার বাসের যাত্রীরা। পুলিশ সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরানোর চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় তারা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেন। ওসি মিজানুর রহমান জানান, “পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখছে। উত্তেজনা এড়াতে শ্রমিকদের সঙ্গে কথাও বলা হচ্ছে।”
শ্রমিকরা বলেন, “আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কারখানার সামনে ও বিভিন্ন সড়কে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাব। ছাঁটাই বাতিল করে সবাইকে পুনর্বহাল করতে হবে। অন্যায় সিদ্ধান্ত আমরা মানি না।”
প্রসঙ্গত, ৩০ অক্টোবর থেকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণা করছেন। বৃহস্পতিবারের প্রতীকী অনশন, বগুড়া সড়কে অবস্থান এবং ব্যর্থ বৈঠক—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অচলাবস্থায় দাঁড়িয়েছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, “যদি প্রয়োজন হয়, আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দেব।”