প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১৬
খাগড়াছড়িতে এক স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে পাহাড়ি জনপদ। ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলছে। সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ির ভেতরে এবং দূরপাল্লার রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি ও সাজেক ভ্যালির পর্যটকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অন্তত সাড়ে তিন হাজার পর্যটক বর্তমানে আটকা পড়ে আছেন, যার মধ্যে সাজেক ভ্যালিতেই রয়েছেন প্রায় দুই হাজারের বেশি দেশি-বিদেশি ভ্রমণকারী। সকালের আনন্দদায়ক যাত্রা মুহূর্তেই পরিণত হয়েছে উদ্বেগ ও ভোগান্তিতে।
অনেক পর্যটককে শহরের দিকে তিন থেকে চার কিলোমিটার পায়ে হেঁটে আসতে দেখা গেছে। তারা অভিযোগ করেছেন, হঠাৎ করে সড়ক অবরোধের কারণে তাদের যাত্রা বিঘ্নিত হয়েছে এবং নিরাপত্তাহীনতার ভয়ও তৈরি হয়েছে।
ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসগুলো মাঝপথে আটকে পড়ায় যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীদের এই দুর্ভোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
অবরোধের শুরু থেকে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে গাছ কেটে ফেলে এবং টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করছে। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কসহ জেলার প্রায় সবকটি সংযোগ সড়ক অচল হয়ে গেছে। যদিও শহর এলাকায় কিছু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করছে। তারা শুধু দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন মৃধা জানিয়েছেন, অবরোধে কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। স্কুল-কলেজ ও অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গত মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে এক স্কুলছাত্রীকে চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। রাতে খোঁজাখুঁজির পর পরিবার তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। পরদিন তার বাবা অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশ শয়ন শীল নামে এক যুবককে আটক করে। বর্তমানে সে ছয় দিনের রিমান্ডে রয়েছে। ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর এ আন্দোলন আরও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন।