প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৮:২১
কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদী থেকে আবারও সাতজন বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এ ঘটনায় একটি মাছ ধরার ট্রলারও তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শাহপরীর দ্বীপের নাইক্ষ্যংদিয়া নামক নাফ নদীর মোহনায় সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম জানান, ট্রলারটির মালিক টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মোনাফের ছেলে উমর ছিদ্দিক। ট্রলারে সাতজন মাঝিমাল্লা ছিলেন।
মাঝি এবাদুল্লাহ বরাত দিয়ে জানান, মাছ ধরার পর টেকনাফে ফেরার সময় আরাকান আর্মির সদস্যরা স্পিডবোটে তাদের ধাওয়া করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফাতংজা খালের দিকে নিয়ে গেছে। ধাওয়ার সময় তিনি মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। স্থানীয় ট্রলার মালিকরা জানান, গত ২০ দিনের মধ্যে ৪০ জন জেলেকে বিভিন্ন ঘটনায় ধরে নেওয়া হয়েছে। এর আগে রবিবার দুটি ট্রলারসহ ১৪ জন, শনিবার একটি ট্রলারসহ ১২ জন, ১২ আগস্ট ৫ জন এবং ৫ আগস্ট দুইজন জেলেকে একইভাবে জিম্মি করা হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মোট ২৪৪ জন বাংলাদেশি জেলেকে আরাকান আর্মি আটক করেছে। এই ঘটনার ফলে স্থানীয় জেলেরা নিরাপত্তার উদ্বেগে রয়েছে এবং মাছ ধরার কাজে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন। ট্রলার মালিকরা এবং জেলেরা প্রশাসনকে নিয়মিত জানাচ্ছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, সম্প্রতি আরাকান আর্মির এমন অভিযান বেড়ে গেছে। তারা মাছ শিকারের পর ফেরার পথে বাংলাদেশি জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করছে। তিনি বলেন, এই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও জেলেরা আরাকান আর্মির এ ধরনের অভিযান প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, সীমান্তবর্তী এসব এলাকায় নিরাপত্তা ও নজরদারি আরও কঠোর করা প্রয়োজন যাতে জেলেরা নির্ভয়ে তাদের পেশায় নিয়োজিত থাকতে পারেন।
এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জেলেরা আশঙ্কা করছেন, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ জিম্মি হতে পারে। প্রশাসন ও সীমান্ত রক্ষীরা অভিযান বাড়িয়েছেন, তবে পরিস্থিতি এখনো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
স্থানীয় কমিউনিটি নেতারা দাবি করছেন, নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি জেলেদের জন্য জরুরি সহায়তা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে তারা জীবিকা নির্বাহে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সম্মুখীন না হন।