প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৩:৮
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় জাতীয় রাজনৈতিক দল জেএসএস ও ইউপিডিএফের সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনা নতুন করে পাহাড় অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। গত শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে জোড়া সিন্ধু কারবারিপাড়া এলাকায় দুই গোষ্ঠীর সশস্ত্র সদস্যরা মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, ইউপিডিএফের কমান্ডার বিপ্লব চাকমার নেতৃত্বে প্রায় ৪০-৪৫ জনের একটি দল এবং জেএসএসের কমান্ডার জয়দেব চাকমার নেতৃত্বে ৩৫-৪০ জনের সদস্যরা ওই সময় এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটায়। এতে ইউপিডিএফ (প্রসিত) দলের সামরিক শাখা ‘গণমুক্তি ফৌজ’ বা ‘পিপলস্ লিবারেশন আর্মি’র চার সদস্য নিহত হন।
ঘটনার পর থেকেই জোড়া সিন্ধু কারবারিপাড়া এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে নিজেদের ঘর থেকে বের হচ্ছে না এবং আশপাশের বাজারসহ অন্যান্য এলাকায় থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, গোলাগুলির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ অবস্থান নিয়েছে এবং বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি বলেন, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও সাংগঠনিক বিরোধ বহুদিনের ইতিহাস। মাঝে মাঝে এই ধরনের সশস্ত্র সংঘর্ষ ঘটায় জনজীবন বিঘ্নিত হয়। দীঘিনালায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক এই গোলাগুলির ঘটনাটি আবারো পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ ও প্রশ্ন তুলেছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এই সংঘর্ষ শুধু রাজনৈতিক নয়, এতে স্থানীয় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাও কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা দাবি করেছেন, পার্বত্য এলাকার স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নিরাপত্তার অভাবে এলাকার অর্থনৈতিক কার্যক্রমও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক সংলাপে আরও মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা একবারে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পুনরায় এই ধরনের দুঃখজনক সংঘর্ষ রোধে স্থানীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা আবশ্যক বলে বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন। পাহাড়ের জনজীবন শান্তিপূর্ণ করতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতাও অপরিহার্য।