প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ১৮:১০
আজ ১৪ জুন, মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৮তম বার্ষিকী। ১৯৯৭ সালের এই দিনে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ সীমান্তবর্তী লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রে মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টালের খননকাজের সময় ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। কূপের ৮৫০ ফুট গভীরে বিস্ফোরণে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে, যার শিখা পৌঁছেছিল প্রায় ৫০০ ফুট উচ্চতায়। মুহূর্তেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, আশপাশের গ্রামবাসীরা ঘরবাড়ি ফেলে প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি শুরু করে।
এই বিস্ফোরণে বিদ্যুৎ সরবরাহ, পরিবেশ, বনজ সম্পদ ও গ্যাস মজুদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পুড়ে যায় ২৪৫ বিসিএফ গ্যাস, যার আর্থিক মূল্য সে সময় ছিল প্রায় ৫০ কোটি ডলার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫০টির বেশি চা-বাগান, রেল ও সড়কপথ, বিদ্যুৎ লাইন, খাসিয়াপুঞ্জি এবং জীববৈচিত্র্য। গবেষণায় উঠে আসে, এই দুর্ঘটনার ফলে ৬৩ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়। পুরো ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।
ঘটনার পরপরই গঠিত তদন্ত কমিটি এই বিপর্যয়ের কারণ ও ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরলেও আজ অবধি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি তাদের রিপোর্ট। স্থানীয়রা বারবার ক্ষতিপূরণ দাবির কথা বললেও কোনো সরকারই তা আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। অক্সিডেন্টাল কোম্পানি পরবর্তীতে ইউনিকলের কাছে এবং ইউনিকল শেভরনের কাছে গ্যাসক্ষেত্র হস্তান্তর করে। তবে এই মালিকানা পরিবর্তনের মধ্যেও ক্ষতিপূরণের দায় কেউই স্বীকার করেনি।
পরিবেশবাদী সংগঠন ও স্থানীয়দের উদ্যোগে প্রতি বছর ১৪ জুন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে স্মরণ করা হয় এই ঘটনা। মানববন্ধন ও আলোচনা সভার মাধ্যমে তারা ক্ষতিপূরণের দাবিতে সোচ্চার থাকলেও তা কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এমনকি শেভরন পরবর্তীতে যে নতুন গ্যাসকূপ খনন ও পাইপলাইন স্থাপন করে, তাতেও স্থানীয়দের ক্ষতি হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনার ছয় মাস পর জ্বলন্ত কূপটি সিল করা হলেও এর আগেই অক্সিডেন্টাল বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়। তারা তাদের যন্ত্রপাতি ও রিগের বীমার টাকা পেয়ে গেলেও সরকার বা স্থানীয়রা এক টাকাও পায়নি। তৎকালীন সরকার আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন না হওয়ায় ক্ষতিপূরণ আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ে।
আজ বিস্ফোরিত সেই স্থানটি সবুজ বনে পরিণত হলেও আগুনে পোড়া কিছু গাছ এখনও সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এলাকাটি ঘিরে রয়েছে নিরাপত্তা বেড়া, কিন্তু তা ক্ষতিপূরণের দেয়াল ভাঙতে পারেনি। বনবিভাগ বলছে, প্রাকৃতিক ক্ষতি কখনোই পূরণ হয় না, তবে ক্ষতিপূরণ আদায় হওয়া এখনো তাদের দাবি। স্থানীয়দের আশা, একদিন হয়তো রাষ্ট্রের শক্ত অবস্থানে মাগুরছড়ার হারানো সম্পদ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।