প্রকাশ: ৯ জুন ২০২৫, ২৩:৭
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
কুমিল্লার তিতাস উপজেলার তুলাকান্দি গ্রামে ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী ঘটনা। পারিবারিক অস্বচ্ছলতা ও দীর্ঘদিনের হতাশা থেকে বাক প্রতিবন্ধী পিতা মনু মিয়া তার দুই প্রতিবন্ধী শিশু কন্যাকে বিষপানে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সোমবার (৯ জুন) সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহত শিশু দুটি হলো ১০ বছর বয়সী মনিরা এবং ৬ বছর বয়সী ফাতিহা। বিষক্রিয়ায় ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। তাদের পিতা মনু মিয়াকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর স্থানান্তর করা হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে।
মনু মিয়া ও তার দুই মেয়ে—তিনজনই বাক প্রতিবন্ধী। পরিবারে অন্য সদস্য হিসেবে ছিলেন মা হাসিনা বেগম, যিনি ঘটনার সময় রান্নাঘরে নাস্তা তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ সন্তানদের কান্নার শব্দ না পেয়ে তিনি ঘরে ফিরে এমন করুণ দৃশ্য দেখতে পান।
প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনু মিয়া শরীরে ইনফেকশনের কারণে অনেকদিন ধরেই কাজকর্মে অক্ষম হয়ে পড়েন। ফলে সংসারে অর্থাভাব ক্রমশ বেড়ে যায়। পাশাপাশি তিনজন প্রতিবন্ধী সদস্য নিয়ে দিন কাটানো তার জন্য হয়ে উঠেছিল অসহনীয়। কেউ অভিযোগ না করলেও হতাশা, সামাজিক সংকোচ ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা থেকেই তিনি এমন চরম সিদ্ধান্তে উপনীত হন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. সরফরাজ হোসেন খান জানান, দুই শিশু হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যুবরণ করে। মনু মিয়াকে দ্রুত চিকিৎসা দিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহিদউল্লাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে এটি আত্মহত্যা চেষ্টা ও হতাশাজনিত হত্যা। পরিবারে কোনো পারিবারিক কলহ ছিল না, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসহায়ত্বই এ ঘটনার মূল কারণ।
গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রতিবেশীরা বলছেন, এমন মানবিক বিপর্যয় থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে দারিদ্র্যপীড়িত, প্রতিবন্ধী পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে সবার আগে। প্রয়োজন আর্থিক সহায়তা ও মানসিক সাপোর্ট—না হলে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে।