ঠাকুরগাঁও সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল লেখক সমিতির নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, জমি রেজিস্ট্রির সময় দলিল প্রতি নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করে আসছে এই সমিতি, যা সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে বছরের পর বছর ধরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দলিল লেখার নির্ধারিত ফি থাকার পরেও দলিল লেখক সমিতির নেতারা প্রতি দলিল থেকে ২ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার ফাইল আটকে রাখা হয়। অনেকেই বাধ্য হয়ে চাহিদামতো টাকা দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করাতে বাধ্য হন। এই চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সমিতির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ সরকার, যিনি স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের সাবেক মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় বছরের পর বছর সভাপতির পদ দখল করে রেখেছেন।
সমিতির সদস্য কছির উদ্দিন স্বীকার করেছেন যে, প্রতিদিন ৬০-৭০টি দলিল লেখার বিপরীতে প্রতি দলিলে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয় এবং তা সমিতির ফান্ডে জমা হয়। তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, বাস্তবে এই পরিমাণ আরও বেশি এবং সেটি নির্দিষ্ট কোনো নিয়মের ভিত্তিতে নয়, একেবারে খেয়ালখুশিমতো আদায় করা হয়।
সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে নিয়ম রয়েছে, সরকারি ফি এবং লেখক ফি তালিকাভুক্ত করে টানিয়ে রাখার, কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। আইন অনুযায়ী কোনো লাইসেন্সধারী দলিল লেখক অনিয়ম করলে সাব-রেজিস্ট্রার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ম উপেক্ষিত।
ভুক্তভোগী হুমায়ুন কবির রেজা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "দলিল লেখার ফি জিজ্ঞেস করলে বলে নির্ধারিত কিছু নেই। সবাই নিজেদের ইচ্ছেমতো টাকা নেয়। টাকা না দিলে কোনো কাজ হয় না। আমরা জিম্মি হয়ে গেছি এই চাঁদাবাজদের হাতে।" একই অভিযোগ করেন জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা আরিফুল ইসলাম, সমসের আলী এবং আব্দুর রহিম।
এই ব্যাপারে সমিতির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে ব্যস্ত দেখিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তবে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক দাবি করেন, "চাঁদাবাজি নয়, আমরা সেবা দিয়ে পারিশ্রমিক নিই। কেউ খুশি হয়ে বেশি দেয়, কেউ কম। এই অর্থ সমিতির কল্যাণে ব্যয় হয়।"
ঠাকুরগাঁও সদর সাব-রেজিস্ট্রার রেজাউল করিম বলেন, “জিম্মি করে অর্থ আদায় গ্রহণযোগ্য নয়। এমন অভিযোগ এলে আমরা খতিয়ে দেখি এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাই।”
বাংলাদেশ নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহিদুল আলম ঝিনুক ইতোমধ্যে এক পত্রে নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল লেখক সমিতির নামে চাঁদা আদায় বন্ধ করতে। কিন্তু তদারকি ও আইন বাস্তবায়নের অভাবে নির্দেশনাগুলো কার্যকর হচ্ছে না।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী জানিয়েছেন, কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণ প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করছে, যাতে করে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি মেলে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।