"গ্রামে চল, গ্রাম গড়"—এই স্লোগানকে ধারণ করে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নিরলসভাবে কাজ করছে দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই উপশাখাটি যৌনপল্লী ও চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য এক আশার আলো হয়ে উঠেছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১৯৭২ সালের ২৭ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে এবং দেশের প্রতিটি প্রান্তে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দৌলতদিয়ার এই শাখা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে স্থানীয় মানুষ, বিশেষ করে নারী, শিশু ও যৌনকর্মীদের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে।
দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন ম্যানেজার, দুইজন এমবিবিএস চিকিৎসক, চারজন প্যারামেডিক, একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, একজন করে কাউন্সিলর ও মাঠ সংগঠক এবং চারজন পিয়ার এডুকেটর কর্মরত আছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই টিম কাজ করে।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে নিয়মিত আয়োজন করা হয় মেডিকেল ক্যাম্প। প্রতিটি ক্যাম্পে মাত্র ৫০ টাকায় রোগী দেখেন চিকিৎসকরা। পাশাপাশি রোগীরা চারটি স্ক্রিনিং পরীক্ষা বিনামূল্যে করতে পারেন। প্রয়োজনীয় ওষুধও ক্যাম্প থেকেই স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায়।
সরেজমিনে দৌলতদিয়ার ৬নং ওয়ার্ডের হোসেন মন্ডল পাড়া এলাকায় দেখা গেছে, হ্যান্ড মাইক হাতে প্রচারণা চালাচ্ছেন গণস্বাস্থ্য কর্মীরা। স্থানীয় কাশেম সরদারের বাড়িতে চলছে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। শতাধিক মানুষ সেখানে ভিড় করছেন চিকিৎসা ও ওষুধের জন্য।
ষাটোর্ধ মাজেদা বেগম বলেন, “এতো কাছে ডাক্তার পাবো ভাবিইনি। এখন চোখে কম দেখি, কানে কম শুনি—তবু অল্প টাকায় চিকিৎসা পেয়ে অনেক উপকার হয়েছে।”
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ম্যানেজার মো. জুলফিকার আলী জানান, “যুদ্ধকালীন সময় থেকে আমরা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য চরাঞ্চলের অবহেলিত মানুষদের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছি আমরা।”
তিনি আরও জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারা নিয়মিত বিশেষ ক্যাম্প এবং দেড়-দুই মাস অন্তর স্বল্পমূল্যে চক্ষু অপারেশনের ব্যবস্থাও রাখা হয়।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দৌলতদিয়া শাখা নিঃসন্দেহে এক অনন্য উদ্যোগ, যা সমাজের প্রান্তিক মানুষের কাছে উন্নত জীবনের আশা জাগায়।