প্রকাশ: ৫ মে ২০২৫, ১৫:৪৪
চায়ের রাজধানী এবং পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গলে পৌরসভা গঠনের ৯০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো গড়ে ওঠেনি একটি স্থায়ী ও পরিকল্পিত ময়লার ডাম্পিং স্টেশন। ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পৌরসভাটি ২০০২ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হলেও জনসংখ্যা ও শহরের পরিধি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক সুবিধার উন্নয়ন তেমন দেখা যায়নি। শহরের প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা বর্জ্য ও মানববর্জ্য অপসারণের কোনো স্থায়ী ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় শহরবাসী ও শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
বর্তমানে পৌর এলাকার কলেজ রোডে একটি খোলা জায়গাকে দীর্ঘদিন ধরে ডাম্পিং স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করে আসছে পৌরসভা। অথচ এই এলাকাটির আশপাশেই রয়েছে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ, দি বাডস রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসা। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পথচারীকে এই ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। আশপাশের বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা রোগবালাই, মশা-মাছি আর ধোঁয়ার যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন।
২০১৮ সাল থেকেই এই ভাগাড় স্থানান্তরের দাবিতে বিভিন্ন মানববন্ধন, স্মারকলিপি ও আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বারবার আশ্বাস পাওয়া ছাড়া কোনো বাস্তবিক পরিবর্তন আসেনি। পৌর এলাকার পরিবেশ দূষণ, জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হলেও এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিয়েই সময় কাটিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাগাড়ে ময়লা ফেলা হচ্ছে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে। সীমানা প্রাচীর ছাড়া ওই স্থানে ময়লার স্তূপ পাহাড়সম হয়ে উঠেছে। পথশিশু ও টোকাইরা এখানে অবাধে বিচরণ করছে, পশুপাখিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুর্গন্ধে নাক চেপে চলতে হচ্ছে পথচারীদের, আর বর্জ্যের স্তূপ থেকে ছড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ ধোঁয়া। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দারাও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ময়লার গন্ধ ও ধোঁয়ায়। ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা, অটোচালক থেকে শুরু করে কলেজ শিক্ষার্থী সবাই এক কথায় বলছেন—এটা কোনো সভ্য শহরের পরিবেশ হতে পারে না।
পৌরসভা সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে সদর ইউনিয়নের জেটি রোড এলাকায় ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় ২.৪৩ একর জমি ক্রয় করে সেখানে একটি আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সময় একজন ব্যক্তি আদালতে মামলা করলে, আদালতের আদেশে ২০২৩ সালের ১৩ মে পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকে। ফলে পৌরসভার উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়। মামলা নিষ্পত্তি হলেও কার্যক্রম গতি পায়নি।
বর্তমানে নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে পৌরসভার একটি পরিকল্পনা। শ্রীমঙ্গল পৌর প্রশাসক ও ইউএনও মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, নতুন স্থানে স্যানেটারি ল্যান্ড ফিল্ড ও ফ্যাকাল স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য ২১ কোটি ২৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রায় ৫০ হাজার পৌরবাসী ও শহরতলীর মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ উন্নয়ন হবে বলে জানান তিনি।
ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শুধু ভাগাড় স্থানান্তর নয়, বরং পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি টেকসই মডেল গড়ে উঠবে শ্রীমঙ্গলে। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর শ্রীমঙ্গলবাসীও আশায় বুক বাঁধছে এবার হয়তো সমস্যার স্থায়ী সমাধান আসবে।
তবে এলাকার মানুষ বলছেন, আশ্বাসে নয়, বাস্তবায়নে যেন মনোযোগ দেয় সরকার ও পৌর কর্তৃপক্ষ। বছরের পর বছর ধরে ছাত্র-ছাত্রী ও বাসিন্দারা যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, তার যেন এবার অবসান ঘটে। প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে যেন সময়ক্ষেপণ না হয়, সেই প্রত্যাশাই এখন শ্রীমঙ্গলের জনসাধারণের।