প্রতি বছর ১ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। বাংলাদেশেও এই দিনটিকে ঘিরে থাকে নানা কর্মসূচি ও শোভাযাত্রা। কিন্তু দিবসটি যাঁদের জন্য, সেই শ্রমিকদের অনেকেই জানেন না এই দিবসের তাৎপর্য কিংবা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে। কুমিল্লার দেবীদ্বার পৌরসদরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মে দিবসে কোনো ছুটি নেই খেটে খাওয়া মানুষদের, বরং দিনটিও তারা কাটাচ্ছেন শ্রম বিক্রি করে।
নিউমার্কেট এলাকার একটি নির্মাণ সাইটে দেখা গেলো কামাল হোসেন নামের এক দিনমজুরকে মাটি বহনের কাজে ব্যস্ত। তাকে প্রশ্ন করা হলে বলেন, “আমরা কাম করলেই খাই, কাম না করলে খাই না। দিবস পালন করলে আমাদের তো চাল আসবে না।” পাশেই দাঁড়ানো দুলাল মিয়া জানালেন, “কোনো নির্দিষ্ট মজুরি নাই, দরদাম করেই কাজ করি। দিবস আসুক বা যাক, পেট তো চাল চাই।”
এমন চিত্র শুধু দেবীদ্বার নয়, দেশের বহু অঞ্চলেই একই রকম। এই প্রান্তিক মানুষদের কাছে মে দিবস মানে না কোনো ছুটি, না কোনো অধিকার সচেতনতা। বরং তারা দিনটিকে দেখেন বেঁচে থাকার এক সুযোগ হিসেবে।
মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্য বদলায়নি। পোশাক, জাহাজ, নির্মাণ শিল্পে নিযুক্ত লাখো শ্রমিক পায় না ন্যায্য মজুরি, নেই স্বাস্থ্যসেবা বা নিরাপত্তা। তার মতে, ট্রেড ইউনিয়নগুলোও বাস্তবে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষায় অকার্যকর।
তিনি বলেন, “জাতীয়ভাবে ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাগজে থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই। শ্রমিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ না হলে তাদের জন্য দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া কিছু নয়।”
এমন বৈষম্যপূর্ণ পরিস্থিতিতে শ্রমিক দিবসের তাৎপর্য কীভাবে পৌঁছাবে বাস্তব শ্রমজীবীদের কাছে, সে প্রশ্ন এখন সময়ের দাবি।
এদিকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নানা সংগঠন র্যালি ও আলোচনা সভা করলেও প্রকৃত শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। তারা তখন কাজ করছিলেন সড়কে, নির্মাণ সাইটে কিংবা দিনমজুরের হাটে।
অধিকার ও মর্যাদার যে স্বপ্ন নিয়ে মে দিবস শুরু হয়েছিল, বাংলাদেশের অনেক শ্রমিকের কাছে তা আজও অধরাই থেকে গেছে।