মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী কালার বাজার সংলগ্ন নলু নদের ওপর ৪ কোটি ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি এলাকাবাসীর কাছে এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্মিত এই সেতু নদী থেকে কম উচ্চতায় নির্মিত হওয়ায় নৌপথে চলাচলে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় কৃষক, জেলে ও ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষার সময় নদীতে পানি বাড়লে সেতুর নিচ দিয়ে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কৃষিপণ্য পরিবহন, মাছ শিকার এবং বালু পরিবহনে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌকা ব্রিজ ছুঁয়ে যায়, যা এলাকাবাসীর জন্য দুর্ভোগের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অপরিকল্পিতভাবে নদীর খুব কাছ দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, শুরু থেকেই উচ্চতা বাড়িয়ে সেতু নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছিল, কিন্তু এলজিইডি এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেই দাবি উপেক্ষা করে ইচ্ছামতো নির্মাণ করেছে। ফলে এখন হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
কামালপুর গ্রামের কৃষক রজ্জত মিয়া জানান, সেতুর উচ্চতা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। তিনি বলেন, এলাকাবাসীর অনুরোধ সত্ত্বেও এলজিইডি ও ঠিকাদাররা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো কাজ করেছে। যার ফলে বর্ষাকালে বোরো ধান, বালু ও মাছ পরিবহনকারী নৌকাগুলো আটকে যাচ্ছে এবং ব্যবসা ও কৃষিকাজে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় সেতু নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। উজানের পাহাড়ি বালু মহাল থেকে বালু পরিবহনের জন্য যে নৌপথ ব্যবহার করা হতো তা এখন কার্যত বন্ধ। ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
স্থানীয় বকশিপুর গ্রামের বাসিন্দা রকিব মিয়া বলেন, এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র কৃষক ও জেলে। তারা নৌপথে কৃষিপণ্য ও মাছ পরিবহন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেতু নিচু করে নির্মাণ করায় তাদের জীবনধারায় বাধা সৃষ্টি হয়েছে এবং জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধ্রুব মোশারফ (জেবি)'র এক কর্মকর্তা জানান, প্রকৌশলী যেভাবে ডিজাইন দিয়েছেন, তারা সেভাবেই কাজ করেছেন। অপরদিকে মৌলভীবাজার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ বলেন, সেতুটি পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মিত হয়েছে এবং এর সঙ্গে সংযোগ সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি এখনও উদ্বোধন হয়নি বলেও জানান তিনি।