সীমান্ত পেরিয়ে ভুলে ভারতে, ছেলেকে ফেরত চান দেবীদ্বারের আয়েশা বেগম

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার এক দরিদ্র পরিবারের স্বপ্নভঙ্গের গল্প এটি। আয়েশা বেগমের ছোট ছেলে আবদুল মান্নান গত ১৬ এপ্রিল বেড়াতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে বিএসএফের হাতে আটক হন। এরপর তাকে ভারতের ডাউকি থানা পুলিশ ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা দিয়ে জোয়াই কারাগারে পাঠিয়েছে। ছেলেকে ছাড়া আজ তার মা যেন নিঃসঙ্গ এক জীবনযাপন করছেন।

মান্নান নোয়াখালীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারকে সাহায্য করার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু সে স্বপ্ন আজ থেমে গেছে অজানা এক জেলখানার অন্ধকারে। তার বাবা মৃত, বড় ভাই চা দোকানে কাজ করেন। লেখাপড়া জানা একমাত্র সন্তান ছিল মান্নান। তাকে হারিয়ে পুরো পরিবার আজ বিপর্যস্ত।

ঘটনার দিন মান্নানসহ তিন যুবক সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকার বেউরঝারী সীমান্ত দিয়ে ঘুরতে গিয়ে ভারতের বড়বিল্লাহ বিএসএফ ক্যাম্পের হাতে আটক হন। তাদের পরে ডাউকি থানায় হস্তান্তর করা হয় এবং ফরেনার্স অ্যাক্ট ১৪ ধারায় মামলা রুজু করে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার নম্বর ১৪(৪)২০২৫ইং।

মান্নান তার বড় ভাইকে ভারত থেকে ফোন করে জানিয়েছেন, তিনি ভুল করে সীমান্ত পার হয়েছেন। এরপরে একজন ভারতীয় আইনজীবী পরিচয়ে ফোনে যোগাযোগ করে জামিনের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। এতে পরিবারটি আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে এবং প্রতারণার আশঙ্কা করে।

বিজিবি সূত্র জানায়, মান্নান অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ায় বিএসএফ তাকে আটক করে এবং ভারতীয় পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা করে। অন্যদিকে ভারতীয় হাই কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ ধরনের প্রতারণা ভারতীয় আইনে দায়মুক্ত নয় এবং পরিবার যেন কোনো লেনদেনে না জড়ায়।

মান্নানের মা আয়েশা বেগম বলেন, আমার ছেলে অপরাধী না। সে ভুলে সীমান্ত পেরিয়েছে। ওকে ফিরিয়ে দিন। আমি আর থাকতে পারছি না। মান্নানের ছবি হাতে নিয়ে তার কণ্ঠে শুধু আকুতি—ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিন, জীবিত ফিরিয়ে দিন।

মানবাধিকার কর্মী শরীফুল আলম চৌধুরী মনে করিয়ে দেন, সীমান্ত ইস্যুতে এমন অনেক ঘটনায় মানবিক দিকটি হারিয়ে যায়। সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ চেয়েছেন তিনি যেন এই গল্পটি আরেকটি দুঃখজনক ইতিহাস হয়ে না যায়।