কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলতেই আবারও আলোচনায় চলে এসেছে এক বেনামি চিরকুট। বিপুল অঙ্কের নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার, রৌপ্য ও দেশি-বিদেশি মুদ্রার ভিড়ে একটি চিরকুট আলাদা করে নজর কেড়েছে। সেখানে লেখা ছিল এক অদৃশ্য ব্যক্তির রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ক্ষমতায় আসা নিয়ে তার দোয়া ও আকুতি।
চিরকুটে লেখা ছিল, “হে আল্লাহ, আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামকে ক্ষমতায় দেখতে চাই। হে আল্লাহ, আমার দোয়া কবুল করো। এটাই আমাদের মুসলিমদের চাওয়া, জামায়াতে ইসলাম, আমিন।” এই বক্তব্যে স্পষ্ট একটি রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে, যা মসজিদের মতো পবিত্র স্থানে এই চিরকুটের অবস্থানকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
শনিবার সকাল ৭টায় দানবাক্স খোলার সময় অন্যান্য দানদাতার টাকার সঙ্গে এই চিরকুটটি পাওয়া যায়। ১১টি দানবাক্স খোলার সময় উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী। তাদের সামনেই এই রাজনৈতিক চিরকুটটি উদ্ধার হয়।
এটি প্রথম নয়, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মানত বা দানের সঙ্গে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত মনোবাসনার চিরকুট পাওয়া গেছে। গত বছরের ১৭ আগস্টেও একটি বেনামি চিঠি পাওয়া গিয়েছিল যেখানে লেখা ছিল, “আল্লাহ, শেখ হাসিনাকে তুমি তার বাবার কাছে পাঠিয়ে দাও, আমিন।” সেই চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
পাগলা মসজিদ শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, সামাজিক বিশ্বাস ও মানসিক নির্ভরতায়ও একটি বড় আশ্রয়স্থল। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এখানে দান করে থাকেন, এমনকি রাজনীতি নিয়েও আল্লাহর দরবারে নিজেদের বক্তব্য পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, মসজিদটিকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন, এবং এর সবটাই ধর্মপ্রাণ মানুষের দানের অর্থ থেকেই সম্ভব হচ্ছে।
চিরকুটের এমন প্রকাশ রাজনীতি ও ধর্মের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবনার সৃষ্টি করেছে। তবে মসজিদ কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি ব্যক্তিগত আকুতি, যার সঙ্গে মসজিদের অবস্থান বা মতাদর্শের কোনো সম্পর্ক নেই।