পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ ও বরগুনার বেতাগী উপজেলার মানুষ দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে একটি ভাঙা সেতুর কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের ডোমরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বেড়েরধন নদীর ওপর নির্মিত ডোমরাবাদ-জলিশা সংযোগ সেতুটি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে একটি মালবাহী ট্রলারের ধাক্কায় ভেঙে পড়ে। এরপর থেকে সেতুটি আর সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা হয়নি, ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন।
ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার পর মির্জাগঞ্জ ও বেতাগীর জলিশাসহ আশপাশের এলাকার কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াতে সমস্যা ভোগ করছেন। কৃষক, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের জন্য এটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ছোট নৌকায় নদী পার হতে বাধ্য হচ্ছেন, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিকল্প পথ না থাকায় তাদের অতিরিক্ত ৪-৫ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে, যা সময় ও অর্থের অপচয় সৃষ্টি করছে।
স্থানীয়রা জানান, ব্রিজটি চালু থাকলে দুই উপজেলার মধ্যে সহজ যোগাযোগের পাশাপাশি কৃষিপণ্য পরিবহন ও বাজারে যাতায়াতও সহজ হতো। বর্তমানে নদীর এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে ১০-১২ কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে, যা রোগী পরিবহনসহ জরুরি কাজেও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডোমরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফিরোজ আলম জানান, ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার কারণে বেতাগী উপজেলার জলিশা এলাকার অন্তত ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না। প্রথমদিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পার হলেও পরে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়, ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ব্রিজটি চালু থাকলে তাদের কৃষিপণ্য সহজেই বাজারে পৌঁছানো সম্ভব হতো। কিন্তু এখন তাদের কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়, যা খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরাও পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
মির্জাগঞ্জ উপজেলার প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলেই দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন। তবে স্থানীয়রা দ্রুত নির্মাণকাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন, যাতে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কাজ চলছে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর পার হলেও এখনও ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি, যা তাদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সেতুটি দ্রুত পুনর্নির্মাণের দাবি জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, সরকারের উচিত অবিলম্বে কাজ শুরু করা, যাতে শিক্ষা, কৃষি ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক হয় এবং হাজারো মানুষের ভোগান্তি দূর হয়।