প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:২১
নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর পত্নীতলায় দুই সাংবাদিককে নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সম্প্রতি, স্থানীয় ক্লিনিক মালিকদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়া দুই সাংবাদিকের মধ্যে অন্যতম মাহমুদুন নবীর বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে। উল্টো নির্যাতিতের পরিবারের অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় পুলিশি ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাংবাদিক মহল।
ঘটনার সূত্রপাত পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর সিটি ক্লিনিক থেকে। মাহমুদুন নবী, যিনি দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন ও আঞ্চলিক দৈনিক জয়পুরহাট খবর পত্রিকার প্রতিনিধি, সম্প্রতি এক প্রসূতির সিজার অপারেশনে ভুলের অভিযোগ তুলে একটি সংবাদ প্রকাশ করেন। এই অপারেশন করেছিলেন মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার দেওয়ান সবুর হোসেন। একই সময়ে, মাহমুদুন নবী ও অপর সাংবাদিক রবিউল ইসলাম, যিনি দৈনিক মানবকণ্ঠ পত্রিকার প্রতিনিধি, স্থানীয় ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোর অব্যবস্থাপনা, অপচিকিৎসা, এবং চিকিৎসকদের অনিয়মের বিষয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেন।
এই সংবাদ প্রকাশের জের ধরে, গত ৭ সেপ্টেম্বর মাহমুদুন নবী ও রবিউল ইসলামকে সিটি ক্লিনিকের ভেতরে ধরে নিয়ে যান ডা. দেওয়ান সবুর হোসেন এবং তার ভাড়াটে বাহিনী। সেখানে তাদেরকে আটকে রেখে মারপিট করা হয় এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন তারা। নির্যাতনের এক পর্যায়ে, মাহমুদুন নবীর গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে ভিডিও ধারণ করে এবং সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এবং সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে, ক্লিনিক মালিকরা পাল্টা অভিযোগ করেন যে, সাংবাদিকরা তাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেছিলেন। তবে পুলিশ তদন্তে কোনো সত্যতা না পেয়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিয়ে ছেড়ে দেয়।
বর্তমানে মাহমুদুন নবী বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পরিবার লোকলজ্জায় বাইরে বের হতে পারছেন না।
ঘটনার পর, মাহমুদুন নবীর ভাই নূরু নবী পত্নীতলা থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন। তবে পুলিশ সেই মামলা গ্রহণ না করে, উল্টো ৯ সেপ্টেম্বর, ক্লিনিক মালিকদের চাঁদাবাজির অভিযোগে একটি সাজানো মামলা দায়ের করেছে। এতে মাহমুদুন নবীর বিরুদ্ধে পত্নীতলা উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
এই ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মাহমুদুন নবী জানান, ক্লিনিক ডায়াগনষ্টিক সমিতির নেতারা প্রভাবশালী ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। তবুও তিনি ন্যায়বিচারের আশায় আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অন্যদিকে, রবিউল ইসলাম জানান, থানার পুলিশ রহস্যজনক কারণে ক্লিনিক মালিকদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং তাদের মামলা গ্রহণ করেছে।
পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন জানান, ক্লিনিক ডায়াগনষ্টিক সমিতির লোকজন বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সাথে নিয়ে থানায় এজাহার দিতে আসেন, এবং তাই তাদের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মাহমুদুন নবীর অভিযোগ যথাযথভাবে দায়ের করা হলে, তা আমলে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।