প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:২২
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে অভাবের কারণ দেখিয়ে একদিন বয়সী মেয়ে সন্তানকে অন্যের কাছে দত্তক দিলেন বাবা। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে তাঁর মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গোলাম ফেরদৌস।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে ওই নবজাতককে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বঙ্গ সোনাহাট ইউনিয়নের গনাইরকুটি গ্রামে।
স্থানীয়রা জানান, ওই গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলামের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৩০) গত শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। পরিবারের দাবি অভাবের সংসারে সন্তানের ভরণ পোষণ দিতে না পারার শঙ্কায় ১ দিন বয়সী সন্তানকে শনিবার সকালে প্রতিবেশী এক মামাত বোনের হাতে দত্তক হিসেবে তুলে দেন। এটি ওই দম্পতির পঞ্চম সন্তান। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছেন, স্বভাবগত কারণে তাঁরা এমনটা করেছে। এর আগেও তারা তাদের দ্বিতীয় সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল, শহিদুল ও আকবর আলী জানান, শফিকুলের নিজস্ব কোনো জমি ও ঘর-বাড়ি নেই। অন্যের বাড়িতে থাকেন। স্থলবন্দরে পাথর ভাঙা শ্রমিকের কাজ করে খুব কষ্ট করে সংসার চালায়।
এই লোকের বর্তমানে তিনটি বাচ্চা আছে। এই নিয়ে দুটি মেয়ে বাচ্চা দত্তক দেয়।
ওই নবজাতকের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ১৩ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। কয়েক বছর পর আরও একটি ছেলের জন্ম হয়।
এর পর আমার স্ত্রীর টাইফয়েড জ্বর হয়। তার পর থেকে স্ত্রী কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এর কিছু দিন পরে আরও একটি কন্যা সন্তান জন্ম নিলে সেটাকে এক প্রতিবেশীর কাছে দত্তক দেই। পরের বছর চতুর্থ কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। ওই মেয়ের বয়স এখন ৩ বছর। এর পর গত শুক্রবার পঞ্চম সন্তান জন্ম নিলে শনিবার সকালে প্রতিবেশী এক নিঃসন্তান মামাতো বোনকে দেওয়ার জন্য মামার হাতে তুলে দেই।’
শফিকুল আরো বলেন, ‘আমি সোনাহাট স্থলবন্দরে পাথর ভাঙা শ্রমিকের কাজ করি। আমার থাকার কোনো ঘর নাই। অন্যের বাড়িতে আশ্রিত থাকি। এই সামান্য আয় দিয়ে অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা, তিন সন্তানের ভরণ পোষণ ও সংসারের খরচ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে বুকের ধনকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছি।’
শিশুকে দত্তক নেওয়া পরিবারের সদস্য আকবর আলী বলেন, ‘আমার মেয়ে নিঃসন্তান হওয়ায় শিশুটিকে দত্তক নিয়েছি। আমার মেয়ে ঢাকায় থাকে।’
বঙ্গ সোনাহাট ইউনিয়র পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মইনুল হোসেন লিটন বলেন, ‘ওই ব্যক্তি আগেও একটি সন্তান দত্তক দিয়েছে বলে জেনেছি। সদ্য ভূমিষ্ট নবজাতকেও তার মামাতো বোনের কাছে দত্তক দিয়েছে। অভাবের তাড়নায় নয় সন্তানকে দত্তক দেওয়া তার স্বাভাবগত কারণ। বিষয়টি জানার পর স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় উদ্ধার করে শিশুটিকে তাঁর মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম ফেরদৌস বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে তাঁর মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও তাদের এক সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন। এটা তাদের স্বভাবগত কারণে এমনটা করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তাদেরকে বলা হয়েছে আপনারা যদি আপনার সন্তানকে দত্তক দেন অবশ্যই আইনগতভাবে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। টাকার বিনিময়ে যাতে তাঁরা এমনটা না করেন এই বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলে দেওয়া হয়েছে। তবে ওই পরিবারের পক্ষ থেকে যে কোন সহযোগিতার জন্য আসলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।’