প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ২৩:৮
আশাশুনিতে থামছেনা তক্ষক পাচারের নামে প্রতারনা। অরণ্যনির্ভর উপজেলাটিতে সক্রিয় রয়েছে তক্ষক পাচারকারিরা। প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তক্ষক পাচারকারি প্রতারকরা ঘুরে বেড়িয়ে স্থানীয়দের কোটি টাকার স্বপ্ন দেখায়। বলা হয়, একটি তক্ষকের মূল্য কোটি টাকা। লাখ লাখ টাকায় এটি হাতবদল হয়। অনেক সময় না খেয়ে তক্ষকটি মারা যায়। নিঃস্ব হয়েছে অনেক তক্ষকসন্ধানী।
কিছু লোক প্রচার করছে, তক্ষক দিয়ে এইডস, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের ওষুধ তৈরি হয়। আশাশুনির পুরানোদালান,বহুবর্ষীগাছ,গৃহস্থের বাড়ী থেকে বেশি পরিমানে ধরা হচ্ছে তথাকথিত কোটি টাকা দামের তক্ষক। অবৈধ শিকারী ও পাচারকারী চক্রের করাল থাবায় আশাশুনি থেকে থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে পরিবেশ রক্ষাকারী তক্ষক বা টুট-ট্যাং জাতীয় প্রাণীগুলো।
পাচারকারী চক্রের প্রলোভনে পড়ে স্থানীয় একটি চক্র অবাধে শিকার করেই চলেছে বিভিন্ন প্রজাতির দূর্লভ প্রাণী।আর এ চক্রটি আশাশুনির বুধহাটা,বৈউলা,গাজীরমাঠ,নওয়াপাড়া,শ্বেতপুর এদের শক্ত অবস্থান রয়েছে।বিভিন্ন প্রকার ছলচাতরী করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে॥
বনবিভাগ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে কালেভদ্রেও বন্যপ্রাণী পাচারকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়না। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন ভাবে ছদ্মবেশধারী পাচারকারিরা আশাশুনি থেকে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় তক্ষকের মতো প্রাণীগুলো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারনে মাঝে মাঝেই ধরা পড়ে পাচারকারি চক্রের দিকে, অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু এ দলটি নয়, তক্ষকের সন্ধানে ঘুরছে অনেক মানুষ। প্রাণী পাচারকারী চক্রের জালে ধরা পড়া এসব ব্যক্তির কাছ থেকে জানা গেছে, একটি তক্ষকের মূল্য ওজন ভেদে কোটি টাকাও হয়। কিন্তু তক্ষকের খোঁজে নেমে প্রতারিত হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষ।
বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী তক্ষক ওষুধি তেলসহ নানা প্রয়োজনে ব্যবহার হয়।যদিও বন্য প্রাণী আইন ২০১২ এর ৩২ ধারা মতে তক্ষক জাতীয় প্রাণী ধরা ও পাচার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।টিকটিকির মতো দেখতে ছোট এ প্রাণিটির কিছু বিশেষত্ব আছে। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তক্ষক (টোট্টেং) একটি গিরগিটি প্রজাতি। পিঠের দিক ধূসর, নীলাভ-ধূসর বা বেগুনি-ধূসর। সারা শরীরে থাকে লাল ও সাদাটে ধূসর ফোঁটা। পিঠের সাদাটে ফোঁটাগুলো পাশাপাশি সাত-আটটি সরু সারিতে বিন্যাস্ত। কম বয়সী তক্ষকের লেজে পর পর গাঢ়-নীল ও প্রায় সাদা রঙের বলয় রয়েছে। মাথা অপেক্ষাকৃত বড়, নাকের ডগা চোখা ও ভোঁতা।
চোখ বড় বড়, মণি ফালি গড়নের। লেজ সামান্য নোয়ানো। দৈর্ঘ্য নাকের ডগা থেকে পা পর্যন্ত ১৭ সেন্টিমিটার এবং লেজও প্রায় ততটা লম্বা। তক্ষকের ডাক চড়া, স্পষ্ট ও অনেক দূর থেকে শোনা যায়। রাতের বেলা ডাকে তক্ষক। থাকে বড় আকারের গাছের কোটরে। ছাদের পাশের ভাঙা ফাঁকে বা গর্তে বাস করে তক্ষক। এরা কীটপতঙ্গ, টিকটিকি, ছোট পাখি ও ছোট সাপ খায়। ব্যাপক নিধনের কারণে তক্ষক বিপন্ন হওয়ার পথে। দেশি চিকিৎসায় এ প্রাণীর তেল ব্যবহৃত হয়। ভারত ও বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি তক্ষক আছে।
এছাড়া মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্পুচিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৬০০ প্রজাতির তক্ষকের বাস।প্রাণী বিশে‘তক্ষকের আর্থিক কোনো মূল্য নেই। তক্ষকের দাম এক টাকাও না। তক্ষক ঝোপঝাড় বনজঙ্গল এবং গাছের গুঁড়িতে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
গিরগিটিসহ একই শ্রেণির অন্য প্রাণীরা যেভাবে পরিবেশের জন্য অবদান রাখে ঠিক তেমনি তক্ষকও। বন বিভাগের উচিত সচেতনতা সৃষ্টিতে টিভি-পত্রিকায় তক্ষক বিষয়ে প্রচার করা। যেসব অপরাধ হচ্ছে তা অন্তত কমবে। প্রচারের ফলে প্রাণীটিও রক্ষা পাবে। না হলে প্রাণীটির বিলুপ্তি ঘটবে।’