প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২২, ১:১৩
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ধান-চাল ব্যবসায়ীদের প্রতি সপ্তাহের রিটার্ন দাখিল করার নিয়ম চালু করা হয়েছে। শভ অবশ্যই পালন করতে হবে। লাইসেন্স নেই এমন অনেক ব্যক্তি ধান-চাল কিনে মজুত করে রাখছেন। এতে বাজারে ধান-চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিনা লাইসেন্সে কোনো ব্যক্তি ধান-চালের ব্যবসা করতে পারবে না। লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে অভ্যন্তরীণ আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে খাদ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী নওগাঁ, কুষ্টিয়া, নেত্রকোণা ও দিনাজপুর জেলার সরকারি কর্মকর্তা, কৃষক, চালকল মালিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এসময় মন্ত্রী বলেন, বোরো মৌসুম থেকে ধান-চাল ব্যবসায়ীদের প্রতি সপ্তাহের রিটার্ন দাখিল করার নিয়ম চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা ধানের আড়তের ব্যবসা করছেন তাদের প্রতি সপ্তাহে কতটুকু ধান কিনছেন, কতটুকু ধান কোন মিলে বিক্রি করছেন তার হিসাব সরকারকে দিতে হবে। চালকল মালিকদেরও এই নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়েছে। যারা এই হিসাব দেবে না তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।
এবার ব্যবসায়ীদের প্রতি সপ্তাহের রিটার্ন দাখিলের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। এছাড়া যে সব মিলার কর্পোরেট গ্রুপের কোনো ব্রান্ডের নামে চাল বাজারজাত করার চেষ্টা করবেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খাদ্য নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলে উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্য সঙ্কট হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য আমদানি করা হচ্ছে। তবে কৃষকদেরও এই পরিস্থিতিতে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। নিজেদের যে সব জমি আছে তার সবটুকু জুড়ে ফসল আবাদ করলে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে খাদ্য আমদানি করতে হবে না।
কৃষকদের সরকারি গুদামে ধান বিক্রয়ের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষকদের চাষাবাদে উৎসাহিত করতে সার ও বিদ্যুতে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকী দিচ্ছে। কৃষকদের দায়িত্ব রয়েছে তাঁদের উৎপাদিত ধানের কিছু কিছু সরকারি গুদামে দেওয়া। ২০১৮-১০১৯ সালে ধানের দাম বাজারে অতিরিক্ত পরিমানে কমে যায়। তখন কৃষকেরা হা-হুতাশ করতে শুরু করেন। এ পরিস্থিতিতে সরকার কৃষকদের ধানের নায্য দাম নিশ্চিত করতে মৌসুমের শুরুতেই ধান-চাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে করে ধানের নায্যা মূল্য পাচ্ছেন বলেই কৃষকেরা ধান চাষে আগ্রহ হচ্ছেন। কৃষক লাভবান হচ্ছেন।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য মন্ত্রী বলেন, সরকারি গুদামে ধান বিক্রির সময় কোন কৃষক বা মিলাররা যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হন এবং মধ্যস্বত্বভোগীরা গুদামে ধান দিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও ধান-চাল সংগ্রহের সময় খাদ্যর অপচয় বা নষ্ট না করে ভালোভাবে সংরক্ষনের নির্দেশ দেন মন্ত্রী
নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনলাইনে যুক্ত হয়ে নওগাঁয় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ও সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান।
এ সময় অন্যদের মধ্যে নওগাঁর পুলিশ সুপার রাশিদুল হক, রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা জিএম ফারুক হোসেন পাটোয়ারীসহ সরকারি কর্মকর্তা, কৃষক, চালকল মালিক ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, নওগাঁ জেলায় এবার চলতি আমন মৌসুমে ১১ হাজার ৪৫৪ মেট্রিক টন ধান এবং ২২ হাজার ১৩৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ধান ক্রয় আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান ও ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত সিদ্ধ চাল ক্রয় করা হবে।