প্রকাশ: ৭ আগস্ট ২০২২, ২৩:৪৬
‘পাঁচটা মাইয়া (মেয়ে), অনেক কষ্টে ল্যাহা (লেখা) পড়া করাই। ভাই দেয়ালের লগে (সাথে) পিঠ ঠেইক্কা গ্যাছে। ছোট মাইয়াডা ফোরে পড়ে। উপবৃত্তির ৯৫০ টাহা আইছে মোবাইলে (নগদ একাউন্টে) উঠাইতে দোকানে গেছি দোকানদার কয় (বলে) টাকা অন্য নম্বরে নাকি আবার ক্যাশ আউট হইছে। অথচ ওই নম্বর আমার অচেনা। নম্বরটি বন্ধ আছে। এর আগেও আমার মাইয়ার উপবৃত্তির ১৯শ’ টাকা নিয়া গেছে। এ রহম অইলে আমাগো মত গরীব মানুষের পোলাপান ল্যাহা পড়া করামু ক্যামনে? আক্ষেপ আর অভিমান নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কোড়ালিয়া এ রহমান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়–য়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বাচ্চু কাজী।
শুধু বাচ্চু কাজীই নন সরেজমিনে উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের সাথে আলাপ করে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিভাবকদের দাবি উপবৃত্তির টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। নগদ অ্যাকাউন্টে আসা উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এর সাথে মোবাইল ব্যাংকিং সংশ্লিষ্ট লোকজন জড়িত বলেও ধারণা করেন ওইসব অভিভাবকরা।
জানা গেছে, ২০২১ অর্থ বছরে মোবাইল ব্যাংকিং নগদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। ওই অর্থ বছরের জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কিট অ্যালাউন্স হিসেবে ১ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে বৃত্তির জন্য প্রাক শিক্ষার্থীদের ৭৫ টাকা এবং প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম পর্যন্ত ১৫০ টাকা করে ৬ মাসের টাকা প্রদান করা হয় এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৬মাসের টাকা অভিভাবকদের স্ব-স্ব নগদ অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় রাঙ্গাবালী উপজেলার ৭১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪ হাজার ৯৩৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ হাজার ১৮ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির আওতায় রয়েছে। আর ওইসব শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির সেই টাকা উত্তোলন করতে গিয়েই বিপত্তির মধ্যে পড়ছেন কিছু কিছু অভিভাবকরা। একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ব্যাংকিং নগদে আসার পর সেই টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ক্যাশ আউট হয়ে গেছে অজানা একটি এজেন্ট নম্বরে।
কোড়ালিয়া এরহমান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী অভিভাবক আব্দুস সাত্তার প্যাদা বলেন, ‘আমার দুই নাতি জান্নাতুল ও বাইজিদ একজন প্রথম শ্রেণিতে আরেকজন পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে সবার মোবাইলে নগদে টাকা আসে জেনে আমি স্থানীয় বাজারে গিয়া দোকানির কাছে গেলে, দোকানদার জানায় আপনার টাকা ক্যাশ আউট হয়ে গেছে। শুধু নাতিদেরই নয় অনেক বাচ্চাদের উপবৃত্তির টাকা তোলতে পারে নাই।’
উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের টুঙ্গিবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক আরেক অভিভাবক শামিম সিকদার বলেন, মোবাইলে মেয়ের উপবৃত্তির টাকা আসছে দেখেছি কিন্তু দুইদিন পর দোকানে টাকা উঠাতে গিয়ে দেখি টাকা নাই। এর আগেও মাইয়ার পোশাকের জন্য টাকা আসছিল তাও নিয়া গেছে। মাস্টারেগো কাছে গিয়াও কোন ধরনের ফয়সালা হয় নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, গত জুলাই মাসের ১৯ তারিখের আগে যারা টাকা উত্তোলন করেছে তারা টাকা পেয়েছে। তবে ১৯ তারিখের পর যারা টাকা উত্তোলন করেনি তাদের টাকা উধাও হয়ে গেছে। অনেক অভিভাবক আমাদের কাছে টাকা তুলতে এসে আবার খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হয় কাউখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সালাম মিয়ার সাথে তিনি বলেন, ‘মূলত টাকা ক্যাশ ইন হলে কোন এসএমএস আসে না। যার কারনে অধিকাংশ অভিভাবকগণ জানেও না যে তাদের ফোনে টাকা আসছে। গত জুলাই মাসে ১৯ তারিখের আগে টাকা উত্তোলন করতে গেলে পিন নম্বর ম্যাস করেনি, আবার এর পরে উঠাতে গেলে ক্যাশ আউট দেখায়। অধিকাংশ অভিভাবকরা এসে অভিযোগ জানায় তবে আমাদেরতো কিছু করার নেই।’
রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের দপ্তর থেকে শিক্ষার্থীদের চাহিদা দাখিল করেছি। এরপরে নগদ থেকে যেই টাকাটা ছাড় করা হইছে এরকম কোন ম্যাসেজ আমরা পাইনি। শুধু অভিভাবকদের কাছ থেকে শুনছি। যারা ১৯ জুলাইয়ের পরে যারা টাকা তুলতে গেছে অনেকেরই দেখা যাচ্ছে যে টাকা ক্যাশ আউট হয়ে গেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অভিভাবক জানে না। এরকম আমরা ম্যাসেজ পাইতেছি। তবে আমাদের কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি, মৌখিকভাবে জানিয়েছে। আমরা অধিদপ্তরের উপবৃত্তির সেলএ বিষয়টি জানিয়েছি।