প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১:২৭
বৃহত্তর চট্টগ্রামে মাদকের সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ ৬৫ গডফাদারের হাতে। ইয়াবা ও আইস পাচারের সঙ্গে জড়িত দেড় হাজারের বেশি ক্যারিয়ার। অন্তত ২৫টি কৌশলে তারা মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা দেশে। বারবার অভিযানে মাদক জব্দ হলেও গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ার কারণে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
শুধুমাত্র র্যাবের একক অভিযানে বিগত ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে চলতি বছর পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকেই উদ্ধার হয়েছে ৯৩ লাখ ৩৭ হাজার পিস ইয়াবা। অথচ তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ইয়াবা পাচার হয়ে গেছে সারা দেশে। আর হাজার কোটি টাকার এই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ৬৫ গডফাদারকে চিহ্নিত করেছে র্যাব। এর মধ্যে ৬ থেকে ৭ জন গডফাদার রয়েছে, যারা বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ইয়াবা কারখানার নিয়ন্ত্রণ করছে। আবার ইয়াবার চেয়ে ভয়ংকর মাদক আইস ব্যবসা বেশি লাভজনক হওয়ায় এদের একটি অংশ মিয়ানমারের ইয়াবার কারখানায় আইস তৈরি করছে বলেও তথ্য রয়েছে র্যাবের কাছে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল এম এ ইউসুফ বলেন, এক একটি গ্রুপে মাদক ব্যবসায়ীরা ১০-১২ জন ক্যারিয়ার মেইনটেইন করে থাকে।
গত ৩ বছরের আটক হওয়া মাদক চালানের পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২২ থেকে ২৫ ধরণের কৌশলে মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ইয়াবা এবং আইস পৌঁছে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো মানব শরীরের ভেতরে করেও ইয়াবার পাচার হচ্ছে অহরহ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে শুধুমাত্র ক্যারিয়ারাই ধরা পড়ছে। মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
র্যাব-৭ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, স্টিলের জ্যামিতি বক্সের সঙ্গে ম্যাগনেট লাগিয়ে গাড়ির নিচে লাগিয়ে রাখে। ল্যাপটপের পার্টস খুলে বা পাওয়ার ব্যাংকের ভেতরে, কিংবা বিভিন্ন সবজির ভেতরে নেয়।
মামলার তুলনায় আদালত কম থাকায় নিস্পত্তিতে যেমন দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি গডফাদাররা বিচারের আওতার বাইরে থেকে যাওয়ায় মাদকের বিস্তার না কমে বরং বেড়ে চলছে বলে মনে করছেন র্যাব-৭ এর কোম্পানী কমান্ডার।
চট্টগ্রাম মহানগর জজ আদালত পি পি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন আহমেদ বলেন, একদিনে একটি মাদক মামলা নিষ্পত্তি হলে সেইদিন একদিনে আরও ১০টা মাদক মামলা যোগ হয়। মাদক মামলা ধীর গতি হওয়ার কারণ, কোর্টের সংখ্যা কম।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন সূত্র মতে, মিয়ানমার সীমান্তে প্রতি পিস ইয়াবা মাত্র ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও টেকনাফ এসে দাম হয়ে যায় ৭০ টাকা। আর কক্সবাজার পৌঁছার পর দেড়শ এবং চট্টগ্রামে তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা। সবশেষ পর্যায়ে ঢাকায় পৌঁছালে দাম হয়ে যায় ৫০০ টাকার বেশি।