প্রকাশ: ৩১ মে ২০২১, ১৮:১৫
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার কুন্দনা গ্রামে গ্রামীণ পরিবেশে ১০ বিঘা জমিতে শৌখিন ৫ ভাই মিলে গড়ে তুলেছেন শখের পুকুর। নাম দিয়েছেন শখের শৌখিন পুকুর।
পুকুরের চারপাশে রয়েছে দেশি-বিদেশি ফুলগাছসহ প্রায় ৪০-৫০ প্রজাতির গাছ। এই মনোরম পরিবেশ দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে আসে নানা বয়সী মানুষ। প্রথম দেখায় মনে হবে কোনো মিনি পার্ক।
উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়ন এর অর্ন্তগত ছোট্র একটি গ্রাম কুন্দনা। এ গ্রামের ধনজইল-মাতাজীহাট সড়কের পাশে মৃত তাজেম আলীর ৫সন্তান আনোয়ারুল ইসলাম, ইউনুস আলী, আতোয়ার রহমান, আলতাফ হোসেন ও ইউসুফ আলী ।
তাদের আদি পেশা কৃষি। এই ৫ভাই মিলে বাবা দাদার পৈত্রিক ১০বিঘা জমিতে ২০১৫ সালে ছোট-বড় মিলে ৩টি পুকুর খনন করেন মাছ চাষ করার জন্য। এর পর ২০১৫সালের শেষের দিকে শখের বসে বড় ভাই আনোয়ারুল ইসলাম পরিকল্পনা করেন বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও নানা প্রজাতির গাছ পকুরের চার পাশে রোপন করবেন। এর পর বাঁকি চার ভাইকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশি-বিদেশি গাছের চারা সংগ্রহ করতে শুরু করেন।
বর্তমানে তাদের পুকুরের চারপাশে ৪০-৫০ রকমের ফুল ও নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে। যে কেউ প্রথম দেখায় মনে করতে পারেন এটা কোন এক মিনি পার্ক। একটি প্রান্তিক গ্রামে এমন মনোরম পরিবেশ খুব একটা চোখে পড়েনা। প্রতিদিনই শখের এই শৌখিন পুকুরে দূর -দূরান্ত থেকে নানা শ্রেনী-পেশার মানুষ আসেন দেখতে ও কিছুটা সময় কাটাতে এই নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার মুজিবুর রহমান ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী আফরোজা খাতুন এসেছেন সৌখিন পুকুরে । তার সাথে এসেছেন তার বান্ধবী রাঁখি আক্তার। আফরোজা বলেন, পারিবারিক কাজে এসেছিলাম কুন্দনা গ্রামে । এসে দেখি এত সুন্দর একটি পরিবেশ। ভিতরে প্রবেশ না করে থাকতে পারলামনা। পুরো স্থানটি ঘুরে দেখে খুবই ভালো লেগেছে। মনে হলো যেন কোন পার্কে প্রবেশ করলাম। গ্রামে এত সুন্দর নানা প্রজাতির ফুল গাছ দিয়ে সাঁজানো পরিপাটি করে সত্যিই চমৎকার স্থানটি। আগামীতে সময় পেলে আবার আসবো।
স্থানীয় রাঁইগা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী আহম্মেদ আল হাবিব বলেন, পড়াশোনার ফাঁকে অবসর সময়ে আমিসহ বন্ধরা মিলে এখানে ঘুরতে আসি। পার্ক আকৃতির এই সৌখিন পুকুরের চারপাশে ঘুরে দেখতে বা সময় কাটাতে কোন প্রবেশ মূল্য দিতে হয়না। এখানকার যারা মালিক সেই আঙ্কেলরা খুবই ভালো, তারাই বলে সময় করে ঘুরে যেও প্রতিদিন কোন সমস্যা নাই। আমাদের মন চাইলেও সব সময় শহরের গিয়ে পার্কে ঘুরতে পারিনা। তাই এখানেই আসি ও খেলাধুলা করি নিয়মিত।
মাসুদ রানা নামে স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ৫ভাই মিলে এমন সুন্দর একটি উদ্যোগ নিয়েছেন যা প্রসংশার দাবি রাখে। আমাদের সন্তানদের ইচ্ছে হলেও সব সময় শহরের পার্কে ঘুরতে নিয়ে যেতে পারিনা। তাই সন্তানদের এখানে এনে ঘুরে নিয়ে যাই। অনেক সময় আমরাও এসে অবসর সময় কাটায়। এই স্থানটিকে এলকার সবাই এখন সৌখিন পুকুর নামেই চেনে। অনেক মানুষ আসে প্রতিদিন দেখতে।
সৌখিন পুকরের মালিক ৫ভাইয়ের মধ্যে আলতাফ হোসেন নামের মেজো ভাইয়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দেশের অনেক স্থানে বানিজ্যিক ভাবে ফুল,ফল ও গাছের চাষ হলেও শখ থেকে এবং পবিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পুকুরপাড়ে নানা প্রজাতির গাছের সমারোহে সৌন্দর্যবর্ধন করে গড়ে তোলা ব্যক্তি উদ্যোগে খুব একটা চোখে পড়েনা। মূলত শখ থেকেই আমরা নানা জাতের গাছ লাগিয়ে পার্কের মত করে গড়ে তুলেছি। এখানে প্রবেশ করতে কারো কাছে থেকে কোন প্রবেশমূল্য নেইনা। সকলের জন্যই স্থানটি উন্মুক্ত।
তিনি আরও বলেন, ঈদ, প্রহেলা বৈশাখ,পূজাসহ জাতীয় দিবসগুলোতে এখানে মানুষের সমাগম বেড়ে যায়। পুকুরের পাড়ে কসমস, চন্দ্রমল্লিকা, জেনিয়া, দোলনচাঁপা, দ্যানটাসসহ প্রায় অর্ধশত দেশি - বিদেশী নানা জাতের গাছ রয়েছে এবং ভবিষ্যতে একটি বড় পরিসরে পার্কের মত করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছি আমরা।
স্থানীয় রাইগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মনজুর আলম বলেন, আমার জানা মতে নওগাঁ জেলায় এমন মনোরম পরিবেশ গ্রাম পর্যায়ে কোথায় নেই। আমি কাজের ফাঁকে সময় পেলে সেখানে ঘুরতে যাই মনকে একটু প্রশান্তি দিতে প্রকৃতির মাঝে। ৫ভাইয়ের এমন উদ্যোগ হতে পারে অনেকের জন্য অনুকরণীয় । আগামীতে তারা আরও বৃহৎ পরিসরে করার উদ্যোগ নিবেন এমনটাই প্রত্যাশা করছি।
#ইনিউজ৭১/জিয়া/২০২১