প্রকাশ: ৩১ মে ২০২১, ১১:৪১
শীত, গ্রীস্ম, বর্ষা আসে যায়। দুর্ভোগ শেষ হয় না বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামছরি গ্রামবাসীর। নদী ভাঙন, ঝড়-বন্যায় যখনই দুর্ভোগ নেমে আসে তখনই কেবল জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের নানান প্রতিশ্রুতি শোনা যায়। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন আলোর মুখ দেখে না গ্রামবাসী। ফলে ওই এলাকার প্রায় ৪ হাজার পরিবারের দুর্ভোগ এখন নিত্যসঙ্গী।
বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ ও ৯ ওয়ার্ডের সম্পূর্ণ এবং ৭ নং ওয়ার্ডের কিছু অংশ জুড়ে নদী বেষ্টিত এলাকা লামচির। প্রতি বছর নদী ভাঙন আর বর্ষায় নগরীর সাথে যোগাযোগে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। গত কয়েক বছরে নদী ভাঙনে অনেকে ভিটেমাটি হারিয়ে গ্রাম ছেড়েছেন। কেউবা আবার অন্যের জমিতে ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেরিবাঁধ না থাকায় ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন আর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে যায় ওই গ্রামের রাস্তা-ঘাট ঘর বাড়ি। প্লাবিত হয় স্কুল-মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দিরসহ সহ স্থাপনাও।
তারা আরো জানান, এক বর্ষা মৌসুমের ক্ষতের সাথে যোগ হয় আরেক বর্ষা মৌসুমের ক্ষত। জনপ্রতিনিধি আর সরকারের দায়িত্বশীল দফতরের কর্মকর্তাদের প্রতিশ্রুতি আর জনপ্রতিনিধি পাল্টায় কিন্তু তাদের ভাগ্য পাল্টায় না। দুর্ভোগের কারণে বাধ্য হয়ে এলাকা ত্যাগ করছেন অনেক বসিন্দা।
স্থানীয়রা জানান, গত বছর ঘুর্ণীঝড় আম্ফানের ক্ষতের সাথে যোগ হয় এবারের ইয়াস এর ক্ষত। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ও পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় ফসলী জমি, মাছের ঘের, বাজারসহ প্রায় সব ঘর-বাড়ি। পানি বন্ধী হয়ে পরে লামচরীর অধিকাংশ পরিবার।
কীর্তনখোলা আর আড়িয়াল খাঁ নদীর পানিতে একাকার হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েছে সড়ক গুলো। একাধিক স্থানে সড়ক ভেঙ্গে খালে পরিণত হয়েছে। ফলে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পরেছে কয়েক হাজার মানুষ। ফলে সাঁতার কেটে বা নৌকায় পার হয়ে গন্তব্যে বা বাড়ি যেতে হয় তাদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল নগরী থেকে লামচরি যাতায়াতের জন্য তালতলী থেকে লামচরী পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা। কয়েক বছর আগে এই মূল সড়ক বিলীন হয়েছে কীর্তনখোলা নদীগর্ভে। পরবর্তীতে ওই এলাকার দুটি ইটভাটার মালিকদের অর্থায়নে ও এলাকাবাসীর সহায়তায় পাশ দিয়ে আরেকটি সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়।
সামান্য বৃষ্টি বা জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে সেই সড়কটিও পানিতে ডুবে যায়। সর্বশেষ ঘুর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ওই সড়কটি তলিয়ে যায়। রবিবার ওই সড়কে গিয়ে দেখা গেছে পানি নেমে গেলেও পানির ¯্রােতে সড়কটির ইটবালু সরে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ওই গামের মানিক মৃধা, কালাম ফকির, সাঈদ ফকিরসহ অনেকেই বলেন, “আমরা সাহায্য চাই না”। তাদের দাবী বরিশাল নগরীর সাথে লামচরিবাসীর যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা হোক।
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মুনিবুর রহমান জানান, তালতলী থেকে লামচরী সড়কের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ প্রভাবে রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।