প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২১, ১৮:৪৫
বরিশালের উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ উপজেলার বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী কালিজিরা নদী। এক সময় নৌপথে যাতায়াতের সুবিধাজনক রুট হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই কালিজিরা নদী ব্যবহার করতো।
এখন তা কেবলই স্মৃতি। বর্তমানে নদীটি শুকিয়ে পরিণত হয়েছে খালে, তাও প্রায় পানি শূন্য। “বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে” এমনই অবস্থা প্রবাহমান এ নদীটির।
কালের বিবর্তনে কালিজিরা নদীতে চর জেগে নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে শত শত বসতবাড়ি। বৃক্ষরোপণ আর চাষাবাদ করছে নদীঘেষা বাসিন্দারা। কালিজিরা এক সময়ের ঐতিহ্যবাহি নদী হলেও গতিপথ পাল্টে আর চরের বদৌলতে এখন হয়ে গেছে উজিরপুর-বাবুগঞ্জ সীমান্ত।
জানা গেছে, ১৯৬২ সালেও বড় বড় নৌযান নিয়ে বরগুনা, পিরোজপুসহ দক্ষিনবঙ্গের বণিকরা মালামালসহ এ নদী পথে যাতায়াত করতেন। ধীরে ধীরে নাব্যতা কমে যাওয়ায় ১৯৭০ দশকের শেষের দিকে সে পথও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ছোট ছোট লঞ্চ চলাচল শুরু করে। তখনও সড়ক যোগাযোগের ততটা উন্নতি ঘটেনি। উজিরপুর হয়ে ব্যবসায়ী ও সাধারন যাত্রীরা নৌযান বদল করে ঢাকা যেতো। ৯০ দশকে সে পথও বন্ধ হয়ে যায়। এখন শুধু মাত্র বর্ষার মৌসুম ছাড়া ওই নদীতে নৌকাও চলতে পারে না।
নদীর উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত মোহনা থেকে শুরু করে পানির অভাবে নদী তীরবর্তী ঘন্টেশ্বর, দেহেরগতি, মাধবপাশা, কমলাপুর, চরমলঙ্গা, শংকরপুর, নিত্তনন্দী, মুশুরিয়া, গোয়ালদি মুশুরিয়া, চঁন্দ্রপাড়া, নয়না, হাদীবাসকাঠি, ঝালকাঠীর কাকড়াদাড়ি, গগণ, সঞ্জয়পুর, উত্তমনগরসহ অগ্রভাগের গ্রামের চাষীরা পানির অভাবে শুকনার মৌসুমে ইরি কিংবা রবি শস্য চাষে চরম ভোগান্তিতে পরে। মূল নদীর তলদেশে কিছু পানি থাকলেও, খাল ও শাখা খাল থাকে শুকিয়ে। এসব এলাকার বাসিন্দারা কালিজিরা নদীটি পুনরায় খননের জন্য দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন জানিয়েছেন, মরে যাওয়া এই কালিজিরা নদীর প্রস্থ বিগত ৫০ বছর পূর্বেও ছিল প্রায় ৭ থেকে ৮শত ফুট। তৎকালীন সময়ে বর্তমান গুঠিয়া ব্রিজ এলাকায় ফেরী পারাপার ছিল।
দেহেরগতি গ্রামের বৃদ্ধ মোছলেম উদ্দিন (৭৫) জানিয়েছেন, এই নদীর গভীরতা ছিল শত ফুটের উপরে, জেলেরা তখন সর্বদা ইলিশ শিকার করতো। চরের কারণে ১৯৭৪ সালে ফেরি পারাপার বন্ধ হয়ে পাকা ব্রিজ নির্মিত হলেও ১৯৯৩ সালের দিকে সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে বর্তমানের বেইলি ব্রিজটি নির্মিত হয়।
কালিজিরা নদী সংলগ্ন উজিরপুরের কমলাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসাইন জানিয়েছেন, এই নদীর কমলাপুর অংশ থেকে ৭ কিলোমিটারের মধ্যে কমপক্ষে ১০টি শাখা খাল ছিল। যা শুকনো মৌসুমে সম্পূর্নরুপে পানি শূন্য থাকে। এখন মূল নদীর প্রস্থ সর্বোচ্চ ১৫-২০ ফুট। জোয়ারে সময় পানির গভীরতা ৫ থেকে ৬ ফুট এবং ভাটিতে এক থেকে দেড় ফুট থাকে। ফলে নদীটি এখন গোসল করার উপযোগীও নয় বলেন তিনি।