দিনাজপুর জেলার খানসামায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত ‘সাদা সোনা’ খ্যাত রসুন আবাদে ঝুঁকছেন কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে রসুনে উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাড়েনি দাম। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় গত বছর রসুনের মূল্য কম ছিলো। তবুও এ বছর এই অঞ্চলের কৃষকেরা রসুন চাষ করে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ করা হয়েছে। গত বছর ছিল ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কমেছে রসুনের আবাদ। তারপরও সেচ ও সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার জুগীরঘোপা, কায়েমপুর, জোয়ার, কাচিনীয়া, আগ্রা, গুলিয়ারা ও গোয়ালডিহি গ্রামে রসুন বেশি চাষ করা হয়েছে। কেউ রসুন ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন, কেউবা যত্ন নিচ্ছেন।
চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত মৌসুমের শুরুতে রসুনের ভালো দাম থাকলেও শেষ সময়ে এসে দাম পায়নি কৃষকরা। দাম ভালো না পাওয়ায় এ বছর অনেকেই রসুন চাষ কমিয়ে দিয়েছে।
ভাবকি ইউনিয়নের গুলিয়ারা গ্রামের আলামিন ইসলাম জানান, বছর ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছেন তিনি। বিঘা প্রতি বীজ, সার-কীটনাশক ও সেচ বাবদ খরচ হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। বপন ও নিড়ানিসহ শ্রমিক খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি মোট ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
তিনি জানান, ভালো ফলন হলে বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ রসুন পাওয়া যায়। গড়ে প্রতি মণ রসুন আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা করে হলে দাম পাওয়া যায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকার মতো। রসুন ঘরে তোলা, বাছাই ও বাজারজাতকরণে আরও প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ বাদ দিলেও লাভ থাকে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
একই এলাকার বাবুল ইসলাম জানান, চলতি বছরে ৩ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে রসুন আবাদ করেছেন। রসুন চাষে খরচ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। উপায়ান্ত না পেয়ে এনজিও থেকে টাকা তুলে রসুনের আবাদ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া না পেলে অথবা ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেলে ঋণের টাকা দিতে পথে বসতে হবে তাকে।
উপজেলা কৃষি অফিসার বাসুদেব রায় বলেন, বাজারে দাম ভালো না থাকায় এ বছর কমেছে রসুন চাষ। তবে আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর হেক্টর প্রতি ১০ মেট্রিক টনের বেশি ফলনের আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও রসুন চাষিদের উৎসাহিত করতে উন্নত জাতের বারি রসুন-১ ও বারি রসুন-৩ চাষে সহযোগিতা করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। তাই এবারও রসুনের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।