আজ ৭ জানুয়ারি, কুড়িগ্রামের কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার চতুর্দশ বার্ষিকী। ২০১১ সালের এই দিনে ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে ফেলানীকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মরদেহ দীর্ঘক্ষণ সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকে।
সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানীর লাশের ছবি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এই বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। ফেলানী হয়ে ওঠে সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদের প্রতীক। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি বিশ্ববাসীর কাছে বিএসএফের নিষ্ঠুরতার চিত্র তুলে ধরে।
বিএসএফ প্রথমে হত্যার ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই বিচার ছিল প্রহসনমূলক। হত্যাকারী বিএসএফ সদস্যদের কোনোরূপ শাস্তি হয়নি। ফলে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধের বদলে তা অব্যাহত থাকে। ফেলানী হত্যার পর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিএসএফকে একটি ‘খুনি বাহিনী’ হিসেবে অভিহিত করে। তাদের অভিযোগ, বিএসএফ এর আগেও বহু নারী ও শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
বাংলাদেশের সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণেই ফেলানী হত্যার মতো বর্বর ঘটনা ঘটলেও তা নিয়ে কোনো জোরালো প্রতিবাদ হয়নি। বিশেষত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সীমান্তে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সীমান্ত হত্যার বিষয়ে ভারতের কড়া সমালোচনা করলেও সীমান্তে বিএসএফের হাতে হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি।
ফেলানী হত্যার পর থেকে সীমান্তে অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অনেক ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দোষীদের বিচার হয়নি। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত হত্যার বিষয়টি আজও অমীমাংসিত থেকে গেছে।
আজ ফেলানীর চতুর্দশ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, মানববন্ধন এবং সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে বিশেষ কর্মসূচি। ফেলানীর পরিবার আজও তার হত্যার সঠিক বিচার দাবিতে সোচ্চার।
সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। ফেলানীর মতো আর কোনো কিশোরী যেন সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে না থাকে, সেই নিশ্চয়তা দাবি করছে সচেতন মহল।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।