থার্টিফাস্টে হাজারো পর্যটকের ভীড়ে মুখরিত কুয়াকাটা সৈকত

নিজস্ব প্রতিবেদক
আনোয়ার হোসেন আনু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শুক্রবার ৩১শে ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:২১ অপরাহ্ন
থার্টিফাস্টে হাজারো পর্যটকের ভীড়ে মুখরিত কুয়াকাটা সৈকত

থার্টিফাস্ট নাইটে পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় দেশী বিদেশী পর্যটকদের মেলা বসেছে। পুরানো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করতে সমুদ্র সৈকতে হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। বছরের শেষ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ সহ ২০২২ সালকে স্বরণীয় করে রাখতে কপোত কপোতি, তরুন তরুনীদের ভীড় দেখা গেছে বেশি। 


পাশাপাশি শিশুসহ পরিবার পরিজন নিয়ে থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপন করতে এসেছেন অনেকেই। দিনভর সমুদ্রে গোসল, হই হুল্লোড়, বীচে ফুটবল, ক্রিকেট খেলা, ওয়াটার বাইক রাইডিং, স্পিড বোটে সমুদ্রে জেলেদের মাছধরা, লাইভ বোটে সুন্দরবনের পুবাংশ ফাতরার বন, চরবিজয়, লাল কাকড়ার চর, গঙ্গামতির লেক, আন্ধারমানিক নদীর মোহনা সহ দর্শনীয় স্পটগুলো ঘুড়ে বেড়িয়েছেন ভ্রমণ বিলাসী মানুষগুলো। 


এছাড়া কুয়াকাটার কুয়া, কেরানী পাড়ার শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধবিহার, মিশ্রিপাড়ার সীমা বৌদ্ধবিহার, রাখাইন পল্লী, রাখাইন মার্কেট ঘুরে বেড়ানো এবং কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলেন পর্যটকরা। কেউবা আবার বন্ধু বান্ধব, প্রিয়জন ও পরিবারের সবার সাথে সেলফি তুলে মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। আবার কেউ কেউ পছন্দের ফটোগ্রাফার্স দিয়ে বছরের শেষ সূর্যাদয় সূর্যাস্ত, সমুদ্র সৈকতে ক্যামেরা বন্দি করছেন নিজেকে। আচার, বাচ্চাদের খেলনা ও স্থানীয়ভাবে শুকানো শুটকী মাছ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে বলে পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীরা এমনটাই জানিয়েছেন। কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি পছন্দের তালিকায় ছিল শুটকী মাছ। আগত এসব পর্যটকদের ভীড় থাকবে দুই তিন দিন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।


ভোরের কুয়াশা মাখা সূর্যোদয় ও শেষ বিকেলে পশ্চিমাকাশের দিগন্ত জুড়ে টুক টুকে লাল সূর্য সমুদ্রের মাঝে ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে পুরানো বছরকে বিদায় জানিয়ে ১ জানুয়ারী ভোরে নতুন সূর্য, নতুন প্রত্যাশা নিয়ে সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণে এসেছেন পর্যটকরা। নতুন ভোরের সাথে সাথে করোনা মহামারির দূর্যোগময় দিনকে ভূলে গিয়ে নতুন জীবন, নতুন আশা নিয়ে এগিয়ে যেতে চান আগত পর্যটকরা।


পাবনা থেকে আগত পর্যটক মুনির হোসেন দম্পত্তি জানান, থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপনের জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে কুয়াকাটায় এসেছেন তারা। ২০২১ সালের সূর্যোদয় সূর্যাস্ত উপভোগ করেছেন। সমুদ্র সৈকতসহ দর্শনীয় স্পটগুলো ঘুরে দেখেছেন। নতুন বছরের নতুন সূর্যোদয় দেখার অপেক্ষায় তারা। তিনি বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে তারা মুগ্ধ। করোনা মুক্তির প্রত্যাশাসহ নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি দেশের সকল মানুষকে।  


আবাসিক হোটেল মোটেল সুত্রে জানা গেছে, সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাস, ওশান ভিউ কনভেনশন, কুয়াকাটা গ্রান্ড, খান প্যালেস, গ্রেভার ইন হোটেল সহ বেশিরভাগ আবাসিক হোটেলের রুম অধিকাংশই বুকিং হয়ে গেছে। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেনীর হোটেল গুলোতে অসংখ্য পর্যটকের ভীড়ের মাঝেও রুম এখনও খালি রয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেল মোটেল কর্তৃপক্ষ। খাবার হোটেল গুলোতেও ভীড় দেখা গেছে। তবে খাবারের মান এবং অতিরিক্ত রুম ভাড়া নেওয়ার কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।


এদিকে হোটেল ও রিসোর্ট গুলোতে যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারে সেজন্য রুমের মুল্য তালিকা টানানোর নির্দেশ দিয়েছেন বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক। কক্সবাজারের মত কুয়াকাটায় যেন কোন অপ্রতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্য বিশেষ নজরদারী ছিল প্রশাসনের। পর্যটন পুলিশ, থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশ অসংখ্য পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন। 


হোটেল মোটেল ব্যবসায়িদের সুত্রে জানা গেছে, খোলা স্থানে থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নেই কোন আয়োজন। তবে সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাস সহ কয়েকটি অভিজাত আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের বাড়তি বিনোদনের জন্য ইনডোরে ডিজে পার্টি,কনসার্ট, ফানুস উৎসব ও খাবারের উপর বিশেষ প্রনোদণা প্যাকেজ ঘোষনা করেছে। নতুন বছরে সমুদ্র সৈকতে বেড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছেন অনেক পর্যটকরা। 

ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, পায়রা সেতু উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকেই কুয়াকাটায় পর্যটকদের ব্যাপক চাপ রয়েছে। কক্সবাজারে ঘটনায় কোন প্রভাব পরেনি কুয়াকাটায়। এবছর থার্টিফাস্ট নাইটে সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। আগত পর্যটকদের সেবায় ট্যুরিজম ব্যবসায়ীরা যতেষ্ট আন্তরিক।


সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাস’র জেনারেল ম্যানেজার মো.আল আমিন খান উজ্জল বলেন, থার্টিফাস্ট নাইটে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিশেষ প্রনোদণা অফার রয়েছে। ১২’শ টাকার টিকিটে ৩০-৩৫ আইটেমের গালা ডিনার। এর সাথে উপভোগ করবেন লাইভ কনসার্ট, ডিজে পার্টি ও ফানুস উৎসব। তিনি আরও জানান, রিসোর্টের ৯০ ভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে। 


কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো.শাহ আলম হাওলাদার জানান,তাদের সমিতির আওতাভূক্ত আবাসিক হোটেলের ৮০ভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে। তবে কোন হোটেল মালিক যেন পর্যটকের ভীড়কে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারে এজন্য সার্বক্ষনিক তদারকি করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।


ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক বলেন, ইংরেজি নতুন বছরে অসংখ্য পর্যটকের আগমনকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারীতে সমুদ্র সৈকতসহ দর্শনীয় স্পটগুলো। 

কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক বলেন, আবাসিক হোটেল মোটেল গুলোতে যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারে এজন্য ভাড়ার মুল্য তালিকা টানিয়ে রাখা সহ ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করছে।