নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় মাছ সংকটের কারণে শুটকি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নদী ও জলাশয়ে দেশীয় মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় শুটকি ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। ফলে মাছের দামও বেড়ে গেছে। স্থানীয় বাজারে পুঁটি, খলিশা ও টাকি মাছের দাম কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বেড়েছে, যা শুটকি উৎপাদনেও প্রভাব ফেলছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবছর জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় মাছের সরবরাহ কম। এর ফলে শুটকি তৈরির চাতালগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ কম থাকায় শুটকির দামও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুটকি উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ভরতেঁতুলিয়া পল্লীর ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর যেখানে এক মৌসুমে ২৫ লাখ টাকার শুটকি বিক্রি হয়েছে, সেখানে এবার মাত্র ৫ লাখ টাকার শুটকি উৎপাদন হয়েছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুটকি তৈরির মৌসুম থাকলেও বর্তমানে কাঁচা মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। শুধু খলিশা, পুঁটি, চোপড়া ও টাকি মাছ পাওয়া গেলেও অন্যান্য দেশীয় মাছের সরবরাহ কমে গেছে। এক মন কাঁচা পুঁটি শুকিয়ে এক মন শুটকিতে পরিণত হতে তিন মন মাছ লাগে, যা বাজারে বিক্রি হয় ১০-১২ হাজার টাকায়। খলিশা মাছের ক্ষেত্রে চার মন কাঁচা মাছ থেকে এক মন শুটকি তৈরি হয়, যা ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
স্থানীয় শুটকি ব্যবসায়ী খালেক হোসেন বলেন, নদীতে পানি থাকলেও বিল ও অন্যান্য জলাশয়ে পানি নেই, যার ফলে দেশীয় মাছ কমছে। চায়না জাল ব্যবহারের কারণে মাছের প্রজননও ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে প্রতিবছর দেশীয় মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে, যা শুটকি উৎপাদনের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
শুটকি ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম জানান, স্থানীয় বাজারে মাছের সরবরাহ কম থাকায় বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, যার ফলে উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। এতে ব্যবসায়ীদের লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাজারে মাছ কম থাকায় চাতালগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।
আত্রাই উপজেলার সিনিয়র উপজেলা কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান জানান, এ উপজেলায় ২৬ জন শুটকি ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩০০ জন শ্রমিকের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ সৃষ্টি করে। এবছর মাছের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে, যার প্রধান কারণ পর্যাপ্ত বন্যা না হওয়া। তবে তদারকি অব্যাহত থাকলে প্রায় ১৪২ টন শুটকি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যার বাজারমূল্য ৬ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, আত্রাই থেকে উৎপাদিত শুটকি শুধু দেশেই নয়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও রপ্তানি হয়। সাধারণত এসব শুটকি সৈয়দপুর হয়ে ট্রেনে ভারতে পাঠানো হয়। তবে মাছের সংকট থাকায় রপ্তানিতেও প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।