ধর্ষণের বিচার ব্যবস্থা: এক ভয়াবহ ব্যর্থতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৩ই মার্চ ২০২৫ ০৯:৩৪ অপরাহ্ন
ধর্ষণের বিচার ব্যবস্থা: এক ভয়াবহ ব্যর্থতা

ধর্ষণ একটি অমানবিক অপরাধ, যা শুধু শিকারকেই না, সমাজকে গভীর আঘাত করে। এটি মানুষের বিবেকের মৃত্যু, মানবতার অবমাননা এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থার ব্যর্থতার একটি ভয়াবহ চিত্র। যখন ধর্ষণ ঘটে, তখন তা শুধু একটি অপরাধ হিসেবে দেখা যায় না, এটি আমাদের মানবিকতা, নৈতিকতা, এবং বিবেকের সংকটকে উন্মোচন করে। এই ধরনের ঘটনা সমাজের প্রতি গভীর প্রশ্ন তোলার সুযোগ সৃষ্টি করে—কীভাবে আমাদের বিবেক ঘুমিয়ে থাকে, এবং কেন আমরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হচ্ছি?


ধর্ষণের ঘটনা কখনও যে কোনো সমাজে স্বাভাবিক হতে পারে না। এটি নারীর প্রতি সহিংসতা, অমানবিকতা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের একটি প্রকাশ। একটি ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর জীবনে যে মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতি হয়, তা কখনো মাপা যায় না। একদিকে, ধর্ষণ শিকার ব্যক্তির জীবন চিরতরে বদলে যায়, অপরদিকে, সমাজের মনোভাব ও সমাজের নৈতিক ভিত্তি নড়ে ওঠে। যে সমাজে ধর্ষণের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়, সেই সমাজের বিবেক ও নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।


আমাদের বিচারব্যবস্থা কখনও কখনও ধর্ষণের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে তৎপর না হয়ে ধীর গতিতে কাজ করে। আইনি প্রক্রিয়া, তদন্ত এবং বিচার কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতা ধর্ষকদের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করে, যাতে তারা আইনের ফাঁক দিয়ে মুক্তি পেতে পারে। এই ধরনের ঘটনা সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি করে, এবং অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ার ক্ষোভে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব, সমাজের নিরাপত্তা এবং মানুষের অধিকার রক্ষায় সবসময়ই দৃঢ় হতে হবে।


যদি আমরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে চাই, তাহলে আমাদের আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী এবং দ্রুত কার্যকরী করতে হবে। ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা এবং শাস্তি কার্যকর করার জন্য সামাজিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তবে শুধু আইনই যথেষ্ট নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সচেতনতা ও দায়িত্ববোধও অপরিহার্য। প্রতিটি মানুষ যদি ধর্ষণ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে একযোগে অবস্থান নেয়, তাহলে এই সমস্যা কাটানো সম্ভব।


মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে, এবং তার জন্য সকল স্তরের মানুষকে, বিশেষ করে যুবকদের, নৈতিক শিক্ষা দেওয়া উচিত। সামাজিক অঙ্গনে শৃঙ্খলা, সংবেদনশীলতা এবং মানবিকতা তৈরি করতে হলে আমাদের সকলকে একত্রিত হতে হবে। কারণ, ধর্ষণ শুধু আইন বা নীতির সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্রও। যদি আমরা মানবতা এবং নৈতিকতার পথে চলতে চাই, তাহলে ধর্ষণসহ সকল ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে হবে এবং সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবেই আমরা আছিয়াদের রক্ষা করতে পারব।


লেখা: এম.কে. রানা, গণমাধ্যমকর্মী।