বন রক্ষায় উদাসীনতা, রক্ষাকবচ ঘিরে লুণ্ঠনের লীলাখেলা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম সোহেল, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৬ই মার্চ ২০২৫ ১২:২৫ অপরাহ্ন
বন রক্ষায় উদাসীনতা, রক্ষাকবচ ঘিরে লুণ্ঠনের লীলাখেলা!

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরযমুনা সংলগ্ন মাঝেরচরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল অব্যাহতভাবে উজাড় হচ্ছে। বনখেকোরা দিনের পর দিন এসব বনভূমির গাছ কাটছে এবং পাচার করছে। একদিকে বন উজাড় হওয়ার ঘটনা ঘটছে, অন্যদিকে বনভূমির জমি দখল করে মাছের ঘেরের আয়তন বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব ঘটনার মধ্যে বন রক্ষাকারী বন বিভাগ প্রায় উদাসীন রয়েছে, ফলে এলাকাবাসী এ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।


এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাতে বনখেকোরা গাছ কাটে এবং সেগুলো পাচার করে বা গাছের টুকরো ফেলে রেখে যায়। স্থানীয়রা জানান, যারা প্রতিবাদ করেন, তাদের বাড়ির পুকুর বা মাছের ঘেরে কাটা গাছের টুকরো ফেলে দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে চরযমুনার হাবিবুর রহমানের সাথে, যিনি বলেন, "আমার ঘেরে ৩০ থেকে ৩৫টি গাছ ফেলে রাখা হয়েছে। এতে ঘেরের মাছ মারা গেছে। আমি এর বিচার চাই।"


এছাড়া, স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী জাকারিয়া জানান, এই বন উজাড় হলে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এবং পশু-পাখির অভয়ারণ্যও ধ্বংস হবে। তিনি বলেন, "এই বাগান আমাদের জন্য ঢালের মতো, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু দিনদিন এটি উজাড় হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।"


স্থানীয়দের মতে, ২০২০ সাল থেকে বনায়নের ধ্বংসের মাত্রা বেড়েছে। বিশেষত, স্থানীয় ব্যক্তি জুয়েল সিকদার মাছের ঘেরের আয়তন বাড়ানোর জন্য বনভূমি দখল করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ২০২০ সালে বনায়ন ধ্বংস করে মাছের ঘের তৈরি করেছিলেন এবং বর্তমানে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে নতুন বাঁধ নির্মাণ করেছেন। একাধিক স্থানীয় বাসিন্দার মতে, জুয়েল সিকদারের ঘেরের পানি নিষ্কাশনের জন্য বনের মধ্যে ভেকু মেশিন দিয়ে নালা ও কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে।


এদিকে, বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন, গাছ কাটার কোনো তথ্য তার কাছে নেই, তবে ডাল-পালা এলাকাবাসী জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি আরও জানান, বনের মধ্যে কাজ করার জন্য তিনি কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন বিভাগের সদস্যরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান জানান, "সংরক্ষিত বনাঞ্চল কেটে মাছের ঘের করার খবর পেয়েছি। শিগগিরই উচ্ছেদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি সরকারি কর্মকর্তারাও দোষী হন, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"


চরযমুনার মাঝেরচর বনায়ন ৭০-৮০ দশকের দিকে সৃজন করা হয়েছিল, যা এখন পরিবেশ রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বনায়ন জীববৈচিত্র্য রক্ষা ছাড়াও স্থানীয় জনগণের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছিল। তবে বর্তমানে এটি ক্ষতির মুখে পড়েছে, যা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।