খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে জেলার আক্তার হোসেন শেখকে তার অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন কারারক্ষীরা। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ অবরোধ চলতে থাকে। পরে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিন আক্তার হোসেন শেখের খাগড়াছড়িতে শেষ কর্মদিবস ছিল। তবে তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কারারক্ষী ও বন্দীদের ওপর মানসিক নির্যাতন, অবৈধ টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগ ছিল বলে জানা গেছে।
অবরোধকারী কারারক্ষী নাছির উদ্দীন ও আব্দুস সালাম জানান, জেলার নিয়মিতভাবে কারারক্ষীদের কাছ থেকে কাজের বিনিময়ে টাকা দাবি করতেন। এছাড়াও বন্দীদের কাছ থেকেও টাকার বিনিময়ে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতেন।
নাছির উদ্দীন বলেন, "বন্দীদের কাছ থেকে টাকা না নিলে তাদের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হতো। একবার বন্দীরা তাকে আক্রমণের চেষ্টা করলে আমরা তাকে রক্ষা করি। তার বিরুদ্ধে আগেও একাধিক অভিযোগ এসেছে এবং তদন্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে তাকে ওএসডি করে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি হঠাৎ করেই আমাদের রাজশাহী বদলি করে দেন, যা আমরা মেনে নিতে পারিনি।"
এ ঘটনার খবর পেয়ে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার ও জেলা প্রশাসকের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. শাহীন আলম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসান মারুফ কারারক্ষীদের সঙ্গে আলোচনা করে অভিযোগ শুনেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক বাপ্পি দাশও জেলার আক্তার হোসেন শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি জানান, "গত বছর আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারাগারে আমাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় এবং টাকা আদায় করা হয়। মাত্র দেড় ফুট জায়গার জন্য ৮-৯ দিনে ৪৬ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।"
একই অভিযোগ করেন কারাগারে থাকা এক বন্দী আব্দুল করিম। তিনি বলেন, "পারিবারিক মামলায় দুই মাসের বেশি কারাগারে থাকার সময় ১০-১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। না হলে মারধর করা হতো। এ ধরনের ঘটনা এখানে নিয়মিত ঘটে।"
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার মো. শাহীন আলম বলেন, "কারারক্ষীদের অভিযোগ শুনেছি এবং আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করব। এটি বড় কোনো সমস্যা নয়, ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে, এবং জেলার অবরুদ্ধ ছিলেন না। তার বদলি হয়েছে, তাই তিনি স্বাভাবিকভাবে এখান থেকে যেতে পারবেন।"
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।