উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা দিনাজপুরে টানা পাঁচ দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। উত্তরের দিক থেকে প্রবাহিত হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে দিনাজপুরসহ আশপাশের অঞ্চল। শনিবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানকার জনজীবন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষগুলো পড়েছেন চরম বিপাকে।
রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা বৃষ্টির মতো ঝরছে। তার সঙ্গে হিমালয়ের হিম বাতাস যুক্ত হয়ে ঠান্ডার তীব্রতা আরও বাড়িয়েছে। উষ্ণতার জন্য কেউ আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করছেন, আবার কেউ আশ্রয় নিচ্ছেন চায়ের দোকানে। দিনেও দূরপাল্লার যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। শীতের তীব্রতায় জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। কৃষকরা আলু, রসুন এবং বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টের মতো রোগ নিয়ে প্রতিদিনই রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। চিকিৎসকরা শিশুদের বাসি খাবার না খাওয়ানো, খাবার ঢেকে রাখা এবং রাতে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ষষ্ঠী তলায় কাজের সন্ধানে আসা দিনমজুর হাসান আলী জানান, ঠান্ডার কারণে কাজকর্ম কমে গেছে। মানুষ কাজ করাতে চায় না, ফলে একদিন কাজ পাওয়া গেলে দুই দিন বসে থাকতে হচ্ছে। ইটভাটা শ্রমিক সোহেল ইসলাম বলেন, ঠান্ডা বাতাস আর শিশির পড়ার কারণে প্রতিদিন কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। একদিন কাজ করি, আরেকদিন কাজ করা সম্ভব হয় না।
ট্রাকচালক মমিনুর রহমান জানান, গভীর রাত থেকে কুয়াশায় ঢাকা থাকে সড়ক। ফলে যানবাহনগুলোকে ধীর গতিতে চলতে হচ্ছে এবং হেডলাইট জ্বালিয়ে পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে গেছে।
আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, দিনের বেলা সূর্যের দেখা না পাওয়ার কারণ বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে জলীয় বাষ্পের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৬ শতাংশ এবং গতিবেগ ঘণ্টায় ৩ কিলোমিটার। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য কিছুটা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে, ফলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়া কর্মকর্তা। শীতের প্রকোপে বিপর্যস্ত জনজীবন স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
দিনাজপুরের পরিস্থিতি কেবল এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। ঠান্ডার তীব্রতায় উত্তরের অন্য জেলাগুলোতেও মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। এই তীব্র শীতে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বেশি যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।