১৮ ডিসেম্বর ! নওগাঁ মুক্ত, বিজয়ের পতাকা উড়ে আকাশে

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: বুধবার ১৮ই ডিসেম্বর ২০২৪ ০৪:০২ অপরাহ্ন
১৮ ডিসেম্বর !  নওগাঁ মুক্ত, বিজয়ের পতাকা উড়ে আকাশে

১৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১ – এই দিনটি ছিল নওগাঁর ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। দীর্ঘ যুদ্ধের পর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিন আজও শহরের মানুষের মনে গেঁথে আছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা, মিত্রবাহিনীর সহায়তায়, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে নওগাঁকে মুক্ত করে। 


নওগাঁ ছিল ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে, যা ঢাকার উত্তরের বিভিন্ন জেলা যেমন নওগাঁ, নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা এবং নাটোর অঞ্চলসহ বিস্তৃত ছিল। ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণের পর প্রথম দিকে নওগাঁ মুক্ত ছিল, কিন্তু ২২ এপ্রিল শহরটি পাক বাহিনীর দখলে চলে যায়। মুক্তিযুদ্ধের জন্য নওগাঁর সশস্ত্র সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ অনেক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। 


১৮ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধা জালাল হোসেন চৌধুরী নওগাঁ আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। নদীকুলে এক সম্মেলনে তিনি মুক্তিবাহিনীকে প্রস্তুতি নিতে বলেন, কারণ তখনও শহরটি পাক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা বিশাল বাহিনী নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর নওগাঁর দিকে অগ্রসর হন। তাদের লক্ষ্য ছিল শহরটি পাক বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করা। 


১৭ ডিসেম্বর, শীতের সকালে, মুক্তিবাহিনী নওগাঁর কাছে পৌঁছায় এবং রাতে শুরু হয় তীব্র যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা এবং পাক বাহিনী জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি গ্রামে সম্মুখসমরে জড়িয়ে পড়ে। 


১৮ ডিসেম্বর সকালে, ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা নওগাঁর দিকে এগিয়ে আসেন। বগুড়া থেকে মেজর চন্দ্রশেখর এবং পশ্চিম দিনাজপুর থেকে পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী শহরে প্রবেশ করে। তখন পাক বাহিনীর সামনে আর কোন বিকল্প ছিল না। প্রায় দুই হাজার পাক সেনা মাটিতে অস্ত্র রেখে আত্মসমর্পণ করে। 


এ সময়, নওগাঁর বিহারী সম্প্রদায় কেডি সরকারী স্কুলে আশ্রয় নেয় এবং নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীকে স্বাগত জানান। শহরের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের পর, এস.ডি.ও অফিস চত্ত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধাভরে পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। 


১৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১, ছিল নওগাঁর জন্য বিজয়ের দিন। আজও সেই দিনটি শহরের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে জীবন্ত স্মৃতি হয়ে রয়েছে, যখন বাংলাদেশের পতাকা আকাশে উড়েছিল এবং নওগাঁ মুক্ত হয়েছিল পাক বাহিনীর জবরদস্তির কবল থেকে।