ঝিনাইদহে চিনিকলে অবৈধভাবে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের নিয়োগ, সংঘর্ষের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আতিকুর রহমান, জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১০ই ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:২১ অপরাহ্ন
ঝিনাইদহে চিনিকলে অবৈধভাবে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের নিয়োগ, সংঘর্ষের আশঙ্কা

ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকলে (মোচিক) ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ১৩৭ জন নেতাকর্মীকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ মৌসুমে মিলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আনারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গোলাম রসুল প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে এসব দলীয় ক্যাডারদের দৈনিক হাজিরায় শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেন। 


এদিকে, এসব নিয়োগের জন্য কোনো অফিসিয়াল নিয়োগপত্রও প্রদান করা হয়নি এবং নিয়োগকৃত কর্মীদের বেশিরভাগই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। ১৩৭ জন শ্রমিকের মধ্যে অনেকেই ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, সহ-সভাপতি, ও বিভিন্ন রাজনৈতিক পদে থাকা নেতাকর্মী। তাদের নিয়োগের জন্য ৪ লাখ টাকা করে ঘুষ নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।


২০১৩ সালের পর মিলটির পরিচালনায় নানা অনিয়মের ঘটনায় এইসব অভিযোগ নতুন নয়। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর, অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকরা আত্মগোপন করে। তবে ১৩ ডিসেম্বর মোবারকগঞ্জ চিনিকলের আখ মাড়াই মৌসুম শুরুর আগে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম এসব শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহালের জন্য চাপ দিচ্ছেন। এতে সাধারণ শ্রমিকরা বিরোধিতা শুরু করায়, গত ৯ ডিসেম্বর চিনিকল এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যৌথবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।


মিলটির সাধারণ শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, এসব শ্রমিকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সাক্ষাৎকার নেয়া হয়নি, এবং শুধুমাত্র রাজনৈতিক চাপে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সাধারণ শ্রমিকদের একজন, ইলিয়াস রহমান মিঠু বলেন, "এগুলি একেবারেই অবৈধ নিয়োগ, এদের রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়া আর কিছুই নেই।" জবেদ আলী নামে অন্য এক শ্রমিক জানান, "যদি আবার এসব নেতাকর্মীকে কাজে নেয়া হয়, তা হলে সাধারণ শ্রমিকরা তাদের প্রতিহত করবে, এতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।"


মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "যে ১৩৭ জন শ্রমিক নিয়োগ পেয়েছিল তারা দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করতেন, তাদের কোনও নিয়োগপত্র ছিল না। তাদের পুনঃনিয়োগের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি, তবে তারা কাজের জন্য চাপ দিচ্ছে।" 


এ ঘটনায় মিলটির শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া সুষ্ঠু না হলে আরও বড় সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।