পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরনজির দ্বীপের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে মৌলিক শিক্ষা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বুড়াগৌরাঙ্গ ও তেতুলিয়া নদীর মোহনায় ভেসে ওঠা এই দ্বীপটি বর্তমানে উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। দ্বীপের প্রায় ৬০০ জন বাসিন্দার মধ্যে অধিকাংশই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম করে জীবনযাপন করছেন। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে এখানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকা।
শিক্ষার জন্য স্থানীয় শিশুরা আজও আদর্শ লিপি বইয়ের মধ্যেই আটকে আছে। এ অঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, শিশুদের পড়াশোনার জন্য আশপাশের এলাকা থেকে চেয়ে বা বিভিন্ন মাদ্রাসায় পাঠানোর চেষ্টা করা হলেও, যাতায়াতের কষ্ট এবং নিরাপত্তাহীনতা কারণে শিশুদের পড়াশোনা যথাযথভাবে হচ্ছে না। মনির ফকির বলেন, ‘‘আমাদের এখানে প্রায় ১১০ জন শিশু আছে, কিন্তু তারা কেউ পড়াশোনা করে না। নদী ঘেরা এলাকা হওয়ায় অনেকেই কৃষিকাজে বা মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত।’’
এদিকে, চরনজিরে স্কুল না থাকায় শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। স্থানীয় মজিবর হাওলাদার বলেন, ‘‘আমার ছেলে-পড়াশোনা করতে পারছে না। হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পাঠালেও সে পালিয়ে চলে আসে। এখানে যদি একটি স্কুল থাকতো, তাহলে আমার সন্তানকে অন্য এলাকায় নিয়ে যেতে হতো না।’’
এছাড়া, একাধিক বাসিন্দা জানান, যাতায়াতের জন্য একমাত্র মাধ্যম ছোট নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, যা সংকটপূর্ণ এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি এক গর্ভবতী নারী ট্রলার দুর্ঘটনায় মারা যান, যা এলাকাবাসীর জন্য আরও এক অশনিসংকেত।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশিষ ঘোষ জানিয়েছেন, চরনজিরে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য স্থানীয়রা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার আবেদন করেছেন। খুব শীঘ্রই একটি পরিদর্শন দল সেখানে যাবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসানও এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন। তিনি জানান, যদি প্রয়োজন হয়, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় দ্রুত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হবে।
চরনজিরের শিশুরা যাতে শিক্ষার আলো পেতে পারে, সেজন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়িত হওয়ার অপেক্ষা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।