১৩ বছরের কিশোরীকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার পর স্বামীর বাড়ি থেকে ফেরত আসায় শিকলে বেঁধে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তার মা-বাবার বিরুদ্ধে।
হাবিবা আক্তার (১৩) নামে ওই কিশোরীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর গত শনিবার (১ জুন) বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদত্রিশিরা গ্রামের জামাল হাওলাদারের বাড়িতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
হাবিবার অভিযুক্ত বাবার নাম জামাল হাওলাদার, আর মায়ের নাম মারুফা বেগম। পুলিশ আসার খবর শুনে তারা হাবিবাকে নিয়ে বাড়ি থেকে আত্মীয়ের বাড়ি চলে যান বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরু বাহাদুর ও জামাল তাজ জানান, তিন মাস আগে হাবিবা আক্তারকে তার পরিবার জোর করে একই উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রাংতা গ্রামের শাহজাহান মোল্লার ছেলে সাজিদ মোল্লার সঙ্গে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর স্বামীর ঘরে দুই মাস ছিল হাবিবা। এক মাস আগে সে দক্ষিণ চাদত্রিশিরা গ্রামে বাবার বাড়ি ফেরত আসে। সে তখন তার মা-বাবাকে জানায়, সে আর স্বামীর সংসারে ফেরত যাবে না। এতে হাবিবার ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ শনিবার রাতে বাবার সহযোগিতায় হাবিবার দুই পায়ে শিকল ও দুই হাত পেছনে রশি দিয়ে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করেন মা মারুফা। এসময় হাবিবা চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে যায়নি।
তবে হাবিবাকে মারধরের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহফুজ হোসেন ওই রাতেই কিশোরী হাবিবাকে উদ্ধার করতে যান। তবে তার পরিবার টের পেয়ে ঘরে তালা দিয়ে হাবিবাকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
যোগাযোগ করলে হাবিবার মা মারুফা বেগম মোবাইল ফোনে বলেন, আমাদের দরিদ্র পরিবার হওয়ায় মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারছিলাম না, তাই তাকে বিয়ে দিয়ে দেই। স্বামীর বাড়িতে ফিরে না যাওয়ার মেয়েকে শাসন করেছি।
এ ব্যাপারে বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি বলেন, আমি বিষয়টি জেনে প্রশাসনকে জানিয়েছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে এসআই মাহফুজ হোসেনকে শনিবার রাতেই হাবিবাকে উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তবে তার পরিবার টের পেয়ে ঘরে তালা মেরে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে হাবিবার বাবা জামাল হাওলাদার দাবি করেন, তার স্ত্রী মারুফা বেগম মেয়ে হাবিবাকে নিয়ে গৌরনদী উপজেলার বাউরগাতী গ্রামে তার বোন জামাইয়ের বাড়ি গেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারিহা তানজিন এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।