ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলায় ১৮টি ইটভাটা অবৈধ। তাদের না আছে পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ, না আছে প্রশাসনিক অনুমোদন। ঘাটে ঘাটে অর্থ দিয়ে এ সব ইটভাটা বছরের পর বছর চলে আসলেও নীরব জেলা প্রশাসন। তবে মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে ঘুষের রেট বৃদ্ধি করা হয় এমন অভিযোগ অহরহ। ইটভাটা গুলো অবৈধ হওয়ার পরও কিভাবে চলছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠলেও মাথা ব্যাথা নেই জেলা কিংবা হরিণাকুন্ডু উপজেলা প্রশাসনের।
তবে ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, হরিণাকুন্ডু উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ৮টি ভাটায় অভিযান চালিয়ে ২১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে তারা ানেকটা গায়ের জোরে ইটভাটা পরিচালনা করছে।
সরজমিন দেখা গেছে, হরিণাকুন্ডু উপজেলায় মোট ১৮ টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ৮ নং চাঁদপুর ইউনিয়নে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে গড়ে উঠেছে ৫টি অবৈধ ইটভাটা। সড়কের পাশে বাড়িঘর ও ফসলী জমির মধ্যে এমএসবি ব্রিকস, বাবুল হোসেন খানের আরএসবি ব্রিকস, আলমগীর হোসেনের আনিশা এন্ড তানিশা বিক্রস, শিতলীপাড়া হাকিমপুর এলাকায় মিলন এন্ড জান্নাত ব্রিকস ও পারমথুরাপুর এলাকায় এ.জে.বি ব্রিকস নামে ইটভাটা রয়েছে। এছাড়া হরিণাকুন্ডু পৌর মেয়রসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির ইট ভাটা চলছে অভেধ ভাবে।
যেগুলোর অধিকাংশরই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স। ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, আম, জাম, রেইনট্রি, কদম, কাঁঠাল, খেঁজুর ও নারকেলসহ সবুজ বনায়ন ধ্বংস করে শত শত মন বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের কাঠ মজুদ করা হয়েছে। কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে চুল্লি থেকে অনবরত বের হচ্ছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া।
এছাড়াও ফসলি জমির টপসয়েল কেটে স্তুপ করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষক মুকুল জোয়ারদার জানান, ক্ষেতের পাশে ইট ভাটা গড়ে ওঠায় ধুলোবালিতে ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এছাড়াও ইটভাটার নিজস্ব মাটিভর্তি ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে প্রায়ই ঘটছে নানান দুর্ঘটনা। চাঁদপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান, এই ইটভাটায় দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা গাছের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
কালো ধোঁয়ার কারণে আমার বৃদ্ধ মা শ্বাসকষ্টে ভুগছে। আক্কাস আলী নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, এই সকল অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ না করলে পরিবেশ বিপন্ন হবে। এ সব বিষয় নিয়ে হরিণাকুন্ডু ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান বলেন, শুধু ঝিনাইদহে না সারা দেশেই অবৈধ উপায়ে ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে। ফলে তার ইটভাটারও কোন বৈধ কাগজ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভাটা মালিক জানান, পদে পদে আমাদের টাকা দিতে হচ্ছে। প্রথমে ভাটা প্রতি ২০ হাজার ও পরে আড়াই লাখ টাকা করে চাঁদা ধরা হয়। এই টাকা কার পকেটে উঠছে তা জানেন না সাধারণ ইটভাটা মালিকরা।
অবৈধ ইটভাটা পরিচালনার বিষয়ে ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুন্তাছির রহমান জানান, হরিণাকুন্ডু উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ৮টি ভাটায় ২১ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। হরিণাকুন্ডুতে ১৮টি ইট ভাটা রয়েছে, যাদের কারোরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। তিনি বলেন, ম্যাজিষ্ট্রেট চেয়ে অভিযান পরিচালিত করতে হয় বলে বিলম্ব হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।