ডেঙ্গুতে রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৩৯ অপরাহ্ন
ডেঙ্গুতে রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মুরাদ মৃধার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে নাটোরের বড়াইগ্রামের খাটাসখৈল গ্রামে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায়। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জানাযা শেতে তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। 


সোমবার সন্ধায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এর ১০ দিন আগে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি কিডনি জটিলতায় ও লিবার সিরোসিসে আক্রান্ত হন। মুরাদ মৃধা খাটাসখৈল গ্রামের আব্দুস সাত্তারের দুই ছেলের মধ্যে ছোট। 


আব্দুস সাত্তার মৃধা জানান, তিনি অন্যের খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন। গুড় বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি কোন রকমে সংসার চালান। বাড়ি ঘর তেমন একটা করতে পারেননি। উপার্জনের বড় অংশ ব্যায় করেছেন দুই ছেলের পড়ালেখায়। বড় ছেলে মুন্না মৃধা। তিনি গত বছর মাস্টার্স শেষ করে স্কয়ার কোম্পানীতে কর্মকর্তা পদে চাকুরী করেন। ছোট ছেলে মুরাদ আহমেদ মৃধা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। এক মাস আগে তাঁর অনার্স পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে।  তার স্বপ্ন ছিল পড়া লেখা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হবে। সেই অনুযাই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ছিল। তিনি আরো বলেন, মুরাদ ২৬ জানুয়ারী বাড়ি এসে জ্বরে আক্রান্ত হন। সাথে বমি ছিল। স্থানীয় একজন চিকিৎসককে দেখালে তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে দেন। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়ে। কিন্তু পাঁচদিন চিকিৎসা করার পরও সুস্থ না হওয়ায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে লিভার ও কিডনি সমস্যা ধরা পড়ে। গত বৃহষ্পতিবার তার ডায়ালাইসিস শুরু হয়। 


কিন্তু তাতেও তিনি সুস্থ হননা। পরিবারের লোকজন গত শুক্রবার তাঁকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও ডায়ালাইসিস করতে বলা হলে স্বজনরা তাঁকে আবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সোমবার তাকে দ্বিতীয় ডায়ালাইসিসে নেওয়া হলে অবস্থার আরও অবনতি হয় এবং সন্ধায় তাঁর  মৃত্যু হয়। রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে শতাধিক সহপাঠি তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেন। 


মুরাদের চাচা আফছার মৃধা জানান, আমাদের পৈত্রিক জমি জমা তেমন ছিল না। তবুও তাঁর ভাই (মুরাদের বাবা) তাঁর ছেলেদের ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন। এমনকি সুদের ওপর টাকা ধার নিয়ে ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ ও খাবারের ব্যবস্থা করতেন। তিনি বলেন, যে দিন অনার্সের ফল প্রকাশ হয় সেদিন মুরাদ বাড়িতে ছিল। মোবাইলে প্রথম শ্রেণী পাওয়ার খবর জেনে সে আনন্দে চিৎকার করে উঠেছিল। আমি দৌড়ে তার কাছে গিয়েছিলাম। সে বাজার থেকে মিষ্টি আনায়ে আমাকে খাওয়ায়ে ছিল। আমার কাছে দোয়া চেয়ে বলেছিল, সে বিসিএস কর্মকর্তা হবে।