অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ফাঁকা সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক
পারভেজ সরকার, জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: বুধবার ১লা নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৪৩ অপরাহ্ন
অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ফাঁকা সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক

দেশব্যাপী জামায়াত বিএনপির ডাকা অবরোধের দ্বিতীয় দিন চলছে। অবরোধের কারণে সিরাজগঞ্জ শহরে সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কসহ সকল রুটগুলো ফাঁকা রয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই ফাঁকা থাকলেও মাঝে মধ্যে দুই-একটি পণ্যবাহী পরিবহণ চলাচল করলেও লোকাল বা দুড়পাল্লার যাত্রীবাহী বাস দেখা যায়নি।

 

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাতে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কে রায়গঞ্জের ষোল মাইল এলাকায় একটি গম বোঝাই ট্রাকে আগুন দিয়েছে কে বা কারা। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও গমসহ পুড়ে গেছে ট্রাকটি।


বুধবার (১ নভেম্বর) খোঁজ নিয়ে জানা যায়,বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক রয়েছে ফাঁকা। মাঝে মাঝে দু/একটি পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করলেও দূরপাল্লার বা লোকাল বাস চলাচল করছে না। জেলার এম.এ মতিন পৌর বাস টার্মিনাল থেকে দুরপাল্লার কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। বন্ধ আছে টিকিট কাউন্টারগুলোও। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় সিএনজি,অটোরিকশা,থ্রি-হুইলারে গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেকে। তবে জেলার আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা স্বাভাবিকভাবে চলাচল করলেও দ্বিগুন ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।


দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,এম.এ মতিন পৌর বাস টার্মিনালে যাত্রী সংকটের কারণে অনেকটাই থমকে আছে টার্মিনালটি। হাতেগোনা যে কয়জন যাত্রী আসছেন, জরুরি কাজ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে তারা বিকল্প রাস্তায় বাধ্য হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালিকপক্ষের ইচ্ছে থাকলেও পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় বাস ছাড়তে পারছেন না তারা।


উল্লাপাড়া থেকে সিরাজগঞ্জে আদালতে হাজিরা দিতে আসা মামুন শেখ বলেন, অবরোধের কারণে রাস্তায় কোন বাস চলছে না। মহাসড়ক বাস না চলায় গ্রামের ভিতর দিয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গ দিগুণ ভাড়ায় কোর্টে এসেছি। জরুরি প্রয়োজন না হলে আজ এতো কষ্ট করে আদালতে আসতাম না।


শহরের মাইক্রোবাস চালক ফয়সাল শেখ বলেন,আগামীকাল রাজশাহীতে একটি ভাড়া ছিলো। আজও পাবনায় একটি ভাড়া ছিলো। কিন্তু অবরোধের কারণে গাড়ির ক্ষতি হবে। এজন্য ভয়ে ভাড়াগুলো না করে দিয়েছি। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।


এম.এ মতিন বাসস্ট্যান্ডের সোনার মদিনা পরিবহনের ড্রাইভার চাঁন শেখ বলেন, অবরোধের কারণে দুই দিন ধরে কোন রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। অবরোধ চলথে থাকায় স্ট্যান্ডের প্রায় ৫ শতাধিক বাস চলাচল বন্ধ আছে। সেই সঙ্গে বাসে কর্মরত শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েছে।


ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের অভি এন্টার প্রাইজের কাউন্টার শাহিন শেখ বলেন,বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা অবরোধে দ্বিতীয় দিনেও কোন বাস ছেড়ে যায়নি। রাস্তায় গাড়ি বের হলে ক্ষতির ভয়ে গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করছে না মালিকেরা।


সিরাজগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিনদিনের অবরোধের কারণে বাস চলাচল বন্ধ আছে। তবে  সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বাস ছাড়ার পরিকল্পনা আছে।  


অপরদিকে,বিএনপির ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা না গেলেও শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্যাপক পুলিশ রয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্নস্থানে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে।


পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন,মহাসড়ক ও শহরের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছে। চলাচলকারী ড্রাইভারদের সকালের নাস্তাও উপহার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিএনপি-জামায়াত হরতাল,অবরোধ ও সমাবেশের নামে যাতে নাশকতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জনগণের জান মালের ক্ষয়ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সতর্ক অবস্থানে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অবস্থান নিয়েছে।


সিরাজগঞ্জ হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ওয়াদুদ বলেন,দূরপাল্লার বাস চোখে না পড়লেও মহাসড়কে পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করছে। কোথাও কোনো পিকেটারকে দেখা যায়নি। তিনি আরও বলেন,গতকাল রাতে মহাসড়কের ষোল মাইল এলাকায় কে বা কারা গম বোঝাই ট্রাকটিতে আগুন গিয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।  


সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন,সবকিছুই স্বাভাবিক রয়েছে। মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করতেও দেখা গেছে।


সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সেই সঙ্গে জেলার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। গম বোঝাই একটি ট্রাকে কে বা কারা আগুন গিয়েছে। তাদের খুছে বের করার চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত জেলায় কোনো অ-প্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।