দিগন্ত জোড়া সবুজে ঘেরা হাকিমপুরের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৬ই এপ্রিল ২০২৩ ০২:৫১ অপরাহ্ন
দিগন্ত জোড়া সবুজে ঘেরা হাকিমপুরের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ

সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলা সবুজ প্রান্তরে পরিণত হয়েছে উত্তর জনপদের খাদ্য শষ্য ভান্ডার নামে দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলি উপজেলার প্রতিটি মাঠ। দিগন্তজুড়ে মাঠ যেদিকে তাকাই শুধু সবুজ আর সবুজ।সবুজের সমারোহে চোখ যেন জুড়িয়ে যায়। হিমেল বাতাসে মিষ্টি রোদে হাসছে কৃষকের স্বপ্ন। সবুজ প্রকৃতি সবাইকে যেন মুগ্ধ করে তুলেছে। উপজেলার প্রতিটি মাঠ এখন কৃষকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রতিটি মাঠ এখন কৃষকের সবুজ স্বপ্নে ছেঁয়ে গেছে। ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝিলিক।


উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এবার চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার তিনটি  ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৭ হাজার  ১ শত ২০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সরকারি ভাবে বোরো মৌসুমে বিনামূল্যে বোরা ও উফশি প্রণোদনা দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার বেশি বোর চাষ হয়েছে। অর্থাৎ এবারে বোরো চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৫শত ৯৫ হেক্টর জমিতে। গতবারের মতো শ্রমিক সংকটের কারণে এবারো ইরি-বোরো চাষ নিয়ে অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বোরো চাষ হয়েছে। খাদ্য শস্য ভান্ডার এলাকা হিসেবে এ অঞ্চলের কৃষকরা এবার বোরো চাষকে সৌভাগ্য হিসেবে মনে করছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন এর আশা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষকের।


এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বোরো ও উফশি প্রণোদনা এবং  ডিলারদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার পাওয়ায় কৃষকরা অনেকটা আশ্বস্ত হয়েছেন। বোরো চাষের সময় সার ও বিদ্যুৎ এর জন্য কোন ভোগান্তি পোহাতে হয় নাই। দিনাজপুর জেলার খাদ্য উৎপাদনে এই উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 


উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের বোরো চাষি কোকতাড়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার আমরা বেশি বোরো ধান চাষ করেছি। এবারে বোরো চাষের আগে শ্রমিকের একটু সংকট থাকলেও সার ও বিদ্যুৎ এর কোন ঝামেলা হয় নাই। আশা করছি, এবার বোরো ধানে বাম্পার ফলন হবে। আমাদের এলাকায় এবার উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পর্যাপ্ত প্রণোদনা পেয়েছি। 


উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের বিশাপাড়া গ্রামের কৃষক কাওসার রহমান বলেন, ধান গাছে সময়মতো পানি ও সার  কীট নাশক দেওয়ায় এখন গাছ সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে। চারিদিকে যেন সবুজের সমারোহ। যেদিকে তাকাই দৃষ্টি যেন জুড়িয়ে যায়।


তিনি আরও বলেন, এবারে আমাদের এলাকায় বোরো ধানে এখন তেমন কোন পোকার আক্রমণ নেই। তবে কৃষি অফিস এর পরামর্শ নিয়ে অনেক কৃষক জমিতে কীটনাশক স্প্রে করতিছে। তবে এবার বড় ধরনের ঝড় বা শীলা বৃৃৃষ্টি না হলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি এতে আমরা আমাদের অতিরিক্ত খরচ এবং বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব বলে মনে করছি।


হাকিমপুর হিলি পৌর সভার চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক রিপন বসাক বলেন, আমি এবার প্রায় বিশ বিঘা জমিতে বোরো উফশি ধান চাষ করেছি। মাঠে গিয়ে সবুজের সমারোহ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনূকূলে থাকায় জমিতে তেমন পোকা মাকড় এর তেমন আক্রমণ নাই। তবে কিছু জমিতে কৃষি অফিসের পরামর্শে কীটনাশক স্প্রে করতেছি। আশা করছি বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে। সেই সাথে দাম ভালো পেলে খরচ পুষিয়ে নিতে পারবো। 


উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা রাজিব আহম্মেদ বলেন, ইরি-বোরো ধান চাষে কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারেন এবং কৃষকরা যেন বোরো চাষে কোনো প্রকার সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। যেখানেই সমস্যা সেখানেই আমাদের উপস্থিতি এবং সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। 


এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, এবারের বোরো মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলায় ৭ হাজার ১'শ ২০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৭ হাজার ৫'শ ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। অধিক ফলনের জন্য পরিমিত সার ব্যবহার, পানি সাশ্রয় এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের সচেষ্ট হতে আমরা সব সময়ই পরামর্শ দিয়ে আসছি। এবার হাকিমপুর হিলি এলাকার কোথাও ব্লাষ্ট রোগ বা মাজড়া পোকার আক্রমণ নেই। ফলে আমরা আশা করছি, এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে। আমাদের উপজেলায় লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।