অভাবের তাড়নায় নবজাতককে বিক্রি, পরদিনই মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার ১৬ই অক্টোবর ২০২২ ০৮:৪৫ অপরাহ্ন
অভাবের তাড়নায় নবজাতককে বিক্রি, পরদিনই মৃত্যু

অভাবের তাড়নায় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জন্ম নেওয়া সন্তান (পুত্র) বিক্রি করলেন মা ডলি বেগম। তবে হঠাৎ পরদিন শিশুটি অসুস্থ হয়ে মারা যায়। ডলি লক্ষ্মীপুর গ্রামের হজরত আলীর মেয়ে এবং গোয়ালহাটি (ছুটিপুর) গ্রামের ফিরোজ হোসেনের স্ত্রী।


জানা যায়, স্বামীর সঙ্গে দির্ঘদিন ধরে পারিবারিক সমস্যার কারণে ডলি বেগম তার বাবার বাড়িতে বসবাস করেন। তার স্বামীর ঘরে পূর্বে আরও দুটি সন্তান রয়েছে। হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দিবাগত রাতে সন্তান হওয়ার জন্য প্রসববেদনা শুরু হয় ডলির। পরদিন শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) ভোর ৬টা ২০ মিনিটের সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।


পরবর্তীতে সকালে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। সন্তান জন্ম নেওয়ার পর তিনি বাচ্চাটিকে বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলেন। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি থাকা মনিরামপুর উপজেলার সালামতপুর শেখপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর স্ত্রী আফিয়া বেগম নামের আরেক রোগী তার বাচ্চাকে নিতে রাজি হন।


বাচ্চার জন্য ২০ হাজার এবং হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ পাঁচ হাজার টাকা দিতে রাজি হন আফিয়া বেগম। তিনি বলেন, ডলি বেগমকে প্রথমে দুই হাজর টাকা দিয়ে, ওষুধের জন্য যা খরচ হচ্ছে সেটা আমি করছি। আর বাকি ২০ হাজার টাকা আমি তোমাকে রোববার (১৬ অক্টোবর) দেব।


পরে ১০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ওপর না-দাবিপত্র লিখে আফিয়া বেগমের মেয়ে পিংকির কাছে হস্তান্তর করার জন্য সন্তানের মাসহ তিনজনের কাছ থেকে স্বাক্ষর করে নেন। পরে বাচ্চাটিকে পিংকি বাড়ি নিয়ে যায়। হঠাৎ করে বাচ্চাটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা বাচ্চাটিকে যশোরসহ বিভিন্ন এলাকায় চিকিৎসা দেয়। একপর্যায়ে শনিবার (১৫ অক্টোবর) ফজরের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা বাচ্চাটিকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে বাচ্চাটিকে পারিবারিকভাবে সরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।


ঘটনার বিষয়ে বাচ্চার মা ডলি বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এটি আমার তৃতীয় সন্তান। অভাবের তাড়নায় বাচ্চাটার ভরণপোষণ করতে পারব না বলে আমি ওদেরকে দিয়েছি। তখন বাচ্চা বিক্রির বিষয়ে টাকার নেওয়ার কথা বললেও তিনি বলেন, আমি দুই হাজার টাকা পেয়েছি। আর বিশ হাজার টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে, কিন্তু আমি টাকা নেব না। ওদেরকে আমার বাচ্চা স্বেচ্ছায় দিয়েছি।


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার রশিদুল আলম বলেন, এই ঘটনা আমার অজান্তে ঘটেছে। পরবর্তীতে আমি যখন বিষয়টি শুনতে পেয়েছি, তখন আমি আমার স্টাফদের ডেকে সতর্ক করে দিয়েছি। যেন ভবিষ্যৎ এমন ঘটনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে না ঘটে।