নওগাঁয় ফ্যানের সাথে ঝুলে ছিল গৃহবধুর মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: বুধবার ১১ই মে ২০২২ ০৪:২৮ অপরাহ্ন
নওগাঁয় ফ্যানের সাথে ঝুলে ছিল গৃহবধুর মরদেহ

নওগাঁয় পারিবারিক কলহে স্বামীর ওপর অভিমান করে শান্তনা বেগম (৩০) নামে এক গৃহবধু গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১১ মে) বেলা ১১টার দিকে গৃহবধুর শয়ন ঘর থেকে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত শান্তনা বেগম (৩০) সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়ন এর লস্করপুর (সরদার পাড়া) গ্রামের রতন আলীর স্ত্রী। 


স্থানীয় ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রতন আলীর অভাবি সংসার। সংসারের খরচ যোগান দিতে তিনি স্থানীয় নওগাঁ শহরের একটি মাছের আড়তে শ্রমিকের কাজ করতেন। প্রতিদিনের মত ভোর ৫টার দিকে খাবার খেয়ে আড়তে চলে যান রতন। আড়তে কাজ শেষে বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বাড়ি আসেন তিনি। এসময় ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়ায় অনেক ডাকাডাকি করেও কোন সাড়া মেলেনি। অবশেষে ১১টার দিকে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে স্ত্রী শান্তনাকে ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলতে দেখেন। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গিয়ে শান্তনার মরদেহ উদ্ধার করে।  


নিহত গৃহবধুর স্বামী রতন আলী বলেন, আজ ( বুধবার ) বাড়িতে কয়েকজন আতœীয় আসার কথা ছিল। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এনিয়ে ঝগড়া হয়। তার পর ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজে যাই। কাজ শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় বাড়ি ফিরে ঘরের দরজা বন্ধ পাই। অনেক ডাকাডাকির পর দরজা না খোলায় স্থানীয়দের নিয়ে বেলা ১১টার দিকে দরজা ভেঙ্গে দেখি সেলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। গত ৪বছর আগে আমার ৮বছরের একমাত্র মেয়ে পুকুরের পানিতে গোসল করতে গিয়ে মারা যায়। তার পর থেকে কিছুটা মানসিক অসুস্থ ছিল আমার স্ত্রী। সব মিলে পারিবারিক ছোট ছোট বিষয় নিয়ে মনোমানিল্য লেগেই থাকতো। ছোট একটি বিষয় নিয়ে এভাবে অভিমান করে যে আতœহত্যা করবে তা ভাবতেই পারিনি।


নিহতের বড় ভাই শহরের পার - নওগাঁ মহল্লার বাসিন্দা চপল হোসেন, ৪বছর আগে একমাত্র ভাগিনী রতœা খাতুন পানিতে ডুবে মারা যায়। তার পর থেকেই কিছুটা মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। পারিবারিক ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে টেনশন করতো। আর মাঝে মাঝে পরিবারের লোকজনের সাথে ঝগড়া লেগেই থাকতো। অভিমান করেই হয়তো আতœহত্যা করে থাকতে পারে। আমাদের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ নেই। তবে পুলিশ ময়না তদন্ত করার জন্য মর্গে পাঠিয়েছে বোনের মরদেহ।


নওগাঁ সদর মডেল থানার এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পাওয়ার পর রতন আলীর বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করি। এর পর মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক বিষয়ে নিয়ে ঝগড়া হয়েছে বলে জানায় নিহতের স্বামী। ভোরে নিহতের স্বামী রতন আলী কাজে চলে যাওয়ার পর শান্তনা সকালের কোন এক সময় ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা করে থাকতে পারে।


নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, রতনের বাড়িতে আত্মীয় স্বজন আসার কথা ছিল আজ। অভাবি সংসারে তাদের কিভাবে আপ্যায়ন করা হবে তা নিয়ে রাতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমানিল্য হয়। স্বামীর উপর অভিমান করে সকালের কোন এক সময় গৃহবধু শান্তনা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে এটা আতœহত্যা নাকি হত্যা ময়না তদন্তের পর জানা যাবে। নিহতের পরিবারের সদস্যদের এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ নেই। প্রাথমিক অবস্থায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হবে।