তেঁতুল খেতে কে না পছন্দ করে? ছোট বড় সবার, তেঁতুল দেখলেই জিভে জল চলে আসে। আচ্ছা, কখনো কি দেখেছেন এমন এক তেঁতুল যার রং লাল? সত্যিই অবাক করার মতোই লাল রঙা তেঁতুল। আমরা সাধারণত তেঁতুলের ভেতরের অংশ সাদা রঙেরই দেখে থাকি। থোকায় থোকায় ঝুলে আছে অসংখ্য তেঁতুল। তেঁতুলের কথা শুনলেই জিভে জল চলে আসে। আর তা যদি হয় লাল টুকটুকে বর্ণের, তাহলে তো লোভটা আরও বেড়ে যায়। খাওয়ার জন্য না হলেও লাল বর্ণের তেঁতুল গাছে ঝুলছে এমন কথা শুনলেই যে কারোরই সাধ জাগবে দেখার। আর তাই লাল বর্ণের ব্যতিক্রমধর্মী এই তেঁতুল দেখতে দেশের দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে দর্শনার্থীরা। এদিকে বহু বছরের পুরাতন এই তেঁতুল গাছটিকে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বলছিলাম কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের হিজলবট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী পুরাতন লাল তেঁতুল গাছটির কথা।
লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে, সে যুগে নীলকররা যে সাধারণ মানুষকে অত্যাচার করতো সেটারই স্বাক্ষী স্বরূপ এই গাছের তেঁতুল লাল বর্ণের হয়েছে। তবে এ কথাটা অনেকটাই ভিত্তিহীন।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার উসমানপুরের হিজলবট এলাকায় গড়াই নদীর র্তীরবর্তী এই লাল বর্ণের তেঁতুল গাছ। তেঁতুল গাছের পাশেরই বাসিন্দা আলমগীর হোসেন। বয়সের ভারে প্রায় নুয়ে পড়েছেন তিনি। তবে তার দাবি তেঁতুল গাছটি যেমন ইতোপূর্বে দেখেছিলেন প্রায় তেমনই রয়ে গেছে।
আলমগীর হোসেন জানান, এখানে এক সারিতে এই তিনটি তেঁতুল গাছ রয়েছে। কে এই গাছ কবে লাগিয়েছে তা আমরা জানি না। তবে আমি শুনেছি যে ব্রিটিশ শাসনামলে এই তিনটি গাছের চারা রোপণ করা হয়। তিনটি তেঁতুল গাছের মধ্যে একটিতে লাল বর্ণের তেঁতুল ধরে। আর দুটো গাছে সাধারণ যে বর্ণের তেঁতুল হয় সেই রকমই তেঁতুল ধরে। বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই কোনটা কোন বর্ণের তেঁতুল। তবে ভাঙলে কাঁচা অবস্থায় ভেতরটা টকটকে লাল, আবার পাকলে একই রকম হয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই মনে করেন তেঁতুলের রং লাল হওয়ায় এর স্বাদও ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু না, স্বাদ একই রকম। এলাকাবাসীর ধারণা, ব্রিটিশ আমলে এখানে নীল চাষ হত। সে সময় এখানে নীলকরদের বাড়ি ছিল। পরবর্তীতে যা নদী ভাঙনের কবলে পড়ে শেষ হয়ে গেছে। তবে তাদের রোপণকৃত এই তেঁতুল গাছ তিনটি এখনো রয়েছে।
আর এক স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ার আলী বলেন, তিনটি গাছের তেঁতুলের স্বাদ ও গন্ধের কোনো পার্থক্য নেয়। তবে একটা গাছের তেঁতুল শুধুমাত্র কাঁচা অবস্থায় লাল সিঁদুরের মতো। তাই দূর দূরান্ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই লোকজন আসে এই তেঁতুল ও গাছ দেখতে।
মিতা খাতুন নামে এক নারী জানান, এই তেঁতুল খেতে সাধারণ তেঁতুলের মতো হলেও রংটা খুবই সুন্দর। রক্তের মতো লাল বর্ণের। এই তেঁতুল দিয়ে আমরা গ্রামের নারীরা খুব সুন্দর আচার তৈরি করি। যখন দিনের বেলায় অতিরিক্ত গরম পড়ে তখন আমরা এই গাছ তলায় বসে বিশ্রাম নেই। অন্য জায়গার চেয়ে তেঁতুল গাছ তলায় ঠাণ্ডা বেশি থাকে। ছোট বাচ্চারা সারাদিন এই তেঁতুল গাছ তলায় খেলাধুলা করে। আর বাইরে থেকে যখন লোকজন আসে তখন আমাদেরও খুব ভালো লাগে।
এলাকাবাসীর দাবি লাল বর্ণের এই তেঁতুল গাছ দেখতে প্রতিদিনই যেহেতু লোকজন আসে। এটাকে যদি সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয় তাহলে, দর্শনার্থীদের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে সরকারি রাজস্ব আসবে সেইসঙ্গে গাছগুলো সংরক্ষিত থাকবে।
পরিবেশবীদ গৌতম কুমার রায় জানান, কাঁচা অবস্থায় তেঁতুলের ভেতরটা লাল বর্ণের হলেও স্বাদের দিক দিয়ে কোনো ভিন্নতা নেই। এই বর্ণের তেঁতুল গাছ পাওয়া বিরল। যেহেতু তেঁতুল গাছ অক্সিজেন বেশি সরবরাহ করতে পারে এজন্য এটা পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী। এ ধরনের গাছকে সংরক্ষণের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে এর বংশ বিস্তারের ব্যবস্থা করে সারাদেশে রোপণ উপযোগী করলে এই লাল বর্ণের তেঁতুলের উৎপাদন বাড়বে।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক আহসান কবীর রানা জানান, প্রজননের সময় ক্রোমজমের বিন্যাসে ক্রসিং ওভার হওয়ায় নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই তেঁতুল গাছের ক্ষেত্রেও এটা হয়ে থাকতে পারে। অনেক সময় নতুন বৈশিষ্ট্য টেকসই হয় আবার বিলুপ্তও হয়ে যায়।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।